বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়বে

মঙ্গলবার,

২৫ নভেম্বর ২০২৫,

১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মঙ্গলবার,

২৫ নভেম্বর ২০২৫,

১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়বে

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১০:৩০, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

Google News
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়বে

দেশের সামনে যে জলবায়ু সংকট দ্রুত এগিয়ে আসছে, তা নতুন করে মনে করিয়ে দিল বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নতুন প্রতিবেদন সতর্ক করেছে– এভাবে চলতে থাকলে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও নাজুক হয়ে উঠবে।

জনসংখ্যার ঘনত্ব, উষ্ণায়নের তীব্রতা এবং ভৌগোলিক উন্মুক্ততার কারণে দক্ষিণ এশিয়া ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়বে। একই সময়ে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ তীব্র বন্যার হুমকিতে থাকবে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার বিস্তার– জল থেকে মাটি, মাটি থেকে ফসল–সবকিছু বদলে দিচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ও স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো ‘ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতা (রেজিলেন্স): দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ এবং সংস্থাগুলোকে অভিযোজিত করতে সহায়তা করা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু অভিযোজনের বোঝা মূলত পরিবার ও সংস্থাগুলোর ওপর পড়েছে। জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বেশি। কারণ, তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি পরিবার ও সংস্থাগুলো আগামী ১০ বছরে আবহাওয়ার ধাক্কার আশঙ্কা করছে। ৬৩ শতাংশ সংস্থা ও ৮০ শতাংশ পরিবার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বেশির ভাগই উন্নত প্রযুক্তি এবং জনসাধারণের অবকাঠামো ব্যবহারের পরিবর্তে মৌলিক, কম খরচের সমাধানের ওপর নির্ভর করে।

বাংলাদেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে করা এক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে জরুরি অপূরণীয় প্রয়োজন। এর প্রভাব কেবল পরিবেশগত নয়; বরং গভীরভাবে মানবিক, দরিদ্র এবং কৃষিজীবী পরিবারগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়। বাঁধ ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো সরকারি বিনিয়োগ জীবন বাঁচিয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে।

সরকারি বিনিয়োগ– বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র, সতর্কতা ব্যবস্থা– জীবন বাঁচিয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ হলো, বর্তমান সংকটের মাত্রা এতটাই বড় যে শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। বাজেট সংকটে আক্রান্ত দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর পক্ষে একা সব সামাল দেওয়া সম্ভবও নয়। তাই প্রয়োজন বেসরকারি খাত সামনে এনে অভিযোজনের গতি বাড়ানো।

বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম বলেন, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রেজিলেন্স ক্রমাগত পরীক্ষা করা হচ্ছে। অভিযোজন ব্যাপক হলেও ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকির সঙ্গে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন। দেশের স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করবে লক্ষ্যবস্তুযুক্ত নগর হস্তক্ষেপের পাশাপাশি প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি এবং অভিযোজন অর্থায়ন-উদ্ভাবনী ঝুঁকি অর্থায়ন সমাধানসহ বৃদ্ধির ওপর।
প্রতিবেদনে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য একটি ব্যাপক, বহুমুখী পদ্ধতির আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নতি, আনুষ্ঠানিক ঋণ এবং বীমা সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ মোকাবিলায় বেসরকারি খাত যদি সম্পদ এবং বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন স্থানে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়, তাহলে জলবায়ু সম্পর্কিত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতি এড়ানো যেতে পারে।

বাজেটের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো অর্থের প্রবাহ সম্প্রসারণ, পরিবহন ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক উন্নত করে। এ ছাড়া সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু ও নমনীয় করে এটি সম্ভব করতে সহায়তা করতে পারে। সরকারের এমন অভিযোজন কৌশলও গ্রহণ করা উচিত যেন নতুন স্থিতিস্থাপক প্রযুক্তি বা জনসাধারণের সহায়তা জড়িত থাকে। যেমন রাস্তাঘাট ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যা কর্মসংস্থান এবং মানবপুঁজি রক্ষা করতে সহায়তা করে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং প্রতিবেদনের সহলেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু অভিযোজনের জন্য শিক্ষা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। দেশের মানুষ এবং ব্যবসা এরই মধ্যে অভিযোজন করছে। তবে জলবায়ু সংকটের মাত্রা, জটিলতা সরকার এবং বেসরকারি খাতের কাছ থেকে জরুরি, সমন্বিত পদক্ষেপের দাবি রাখে। সামনের দিকে তাকালে ভবিষ্যতের জন্য স্থিতিস্থাপকতা তৈরির জন্য বাংলাদেশের একটি অনন্য সুযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিনিয়োগ বড় ঝড়ের সময় প্রাণহানি কমাতে সাহায্য করেছে। এটি দেখায় যে লক্ষ্যবস্তু বিনিয়োগ এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় অভিযোজনকে সফলভাবে বৃদ্ধি করতে কীভাবে সহায়তা করতে পারে। সরকার, বেসরকারি খাত ও সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান এবং অংশীদারিত্ব জোরদার করে বাংলাদেশ জলবায়ু-স্মার্ট সমাধান গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে পারে, যা কেবল ঝুঁকি হ্রাস করে না বরং টেকসই উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করে।

বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ শক্তি খাত, অবকাঠামো প্রস্তুতি এবং তথ্য সংগ্রহ– সব ক্ষেত্রেই বড় ধরনের অর্থায়ন প্রয়োজন। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। তবে সেসব নীতির বাস্তবায়নই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে কয়েকটি পাইলট প্রকল্প চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, বাস্তব অভিযোজন কার্যকর করতে হলে সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের