
শরীরে ওষুধ প্রবেশের গতানুগতিক পদ্ধতিগুলো প্রায়শই লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এই পুরনো পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা দূর করতে চীনা বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি – অঙ্গের জন্য স্মার্ট "ব্যান্ড-এইড"। এই ইলেকট্রনিক প্যাচ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের উপর স্থাপন করা যাবে এবং এটি ওষুধ সরবরাহকে করবে আরও সুনির্দিষ্ট, দ্রুত ও কার্যকর।
চীনের বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের একদল গবেষক যৌথভাবে এমন একটি ইলেকট্রনিক প্যাচ উদ্ভাবন করেছেন, যা শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গের জন্য ব্যান্ড-এইডের মতোই কাজ করবে। এই আবিষ্কার ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে মুখে খাওয়া বা শিরার মাধ্যমে দেওয়া ওষুধ প্রায়শই রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়। শুধু তাই নয়, এই পদ্ধতি অনেক সময় সুস্থ অঙ্গের কোষেরও ক্ষতি করতে পারে। অন্যদিকে, বড় আকারের ওষুধের অণুগুলোর জন্য কোষের ঝিল্লি ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ কোষের ঝিল্লি একটি সুরক্ষামূলক প্রাচীরের মতো কাজ করে।
এই সমস্যার সমাধানে চীনা বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। তারা নমনীয় ইলেকট্রনিক্স এবং মাইক্রো-ন্যানো প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তিকে একত্রিত করে একটি অতি-পাতলা প্যাচ তৈরি করেছেন। এই প্যাচ এতটাই পাতলা যে তা দেখতে অনেকটা সাধারণ কাগজের মতোই এবং এটিকে সরাসরি শরীরের কোনো অঙ্গের পৃষ্ঠের সাথে জুড়ে দেওয়া যায়।
এই প্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর অনন্য গঠন, যা ওয়্যারলেস পাওয়ার সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে কাজ করে। এটি অত্যন্ত কম ভোল্টেজে নিরাপদে কোষের ঝিল্লিকে ছিদ্র করতে সক্ষম এবং এর ন্যানো-ছিদ্রের মধ্যে তৈরি হওয়া শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ওষুধের অণুগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিতে পারে।
এই প্রযুক্তি বড় আকারের ওষুধের অণুগুলোকে কোষের ভেতরে প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এতদিন ধরে যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, এই স্মার্ট প্যাচের মাধ্যমে তা সহজেই সমাধান করা সম্ভব হবে। এর ফলে বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় আরও কার্যকর ওষুধ সরবরাহ করা যাবে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো সম্ভব হবে।
গবেষক দলের বিশ্বাস, এই স্মার্ট "ব্যান্ড-এইড" ভবিষ্যতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সরাসরি ওষুধ সরবরাহের এই অভিনব পদ্ধতি একদিকে যেমন ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াবে, তেমনই শরীরের অন্যান্য অংশে ওষুধের অবাঞ্ছিত প্রভাব কমাতেও সাহায্য করবে। এখন দেখার পালা, এই যুগান্তকারী আবিষ্কার বাস্তবে কতটা প্রয়োগ করা যায় এবং রোগীদের জীবনে কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম