
চীন-কম্বোডিয়ার বন্ধুত্ব বহু পুরনো। দুটি দেশের সহযোগিতার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে ইয়ুননানের কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি আর উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ই কম্বোডিয়ান ছাত্রছাত্রীদের প্রথম পছন্দ। এখানে পড়ছেন কম্বোডিয়ার অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী, যারা ভবিষ্যতে নিজ দেশে ফিরে চিকিৎসা সেবায় পরিবর্তন আনতে চান।
কম্বোডিয়ার তরুণ ডাক্তার টোয়েম লিখিনা এখন কুনমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী। এখানেই তিনি পেয়েছেন চীনা নাম—লিনা। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই স্পষ্ট লিনা।
কুনমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী টোয়েম লিখিনা জানালেন, ‘চিকিৎসা অনেক বিস্তৃত একটা ক্ষেত্র। আমি হৃদরোগ নিয়ে বিশেষভাবে জানতে চাই। এখানকার আধুনিক কিছু প্রযুক্তি—যেমন কার্ডিয়াক আল্ট্রাসাউন্ড আর অ্যারিদমিয়ার জন্য ক্যাথেটার অ্যাবলেশন—আমাকে ভীষণ টানে।’
লিনা একা নন, এর আগেও বহু কম্বোডিয়ান শিক্ষার্থী কুনমিং থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করে ফিরে গেছেন নিজের দেশে। তারা নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এসেছেন—যেগুলো ছিল কম্বোডিয়ার জন্য একদম নতুন।
চুন বানহাক তেমনই এক সাবেক ছাত্র। এখন তিনি নমপেনের একটি সামরিক হাসপাতালে কাজ করেন।
কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক ও নমপেন সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক ছুন বুনহাক জানালেন,‘আগে পাথর অপসারণের জন্য প্রায় ১০ সেন্টিমিটার কাটতে হতো। এখন চীন থেকে শিখে এনেছি ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতি। এতে ছোট্ট একটা ছিদ্র করলেই কাজ চলে যায়। এতে রোগীর কষ্টও কম, সেবা ভালো হয়।’
ছুনদের এই সফলতা অনুপ্রাণিত করছে নতুন শিক্ষার্থীদের। টোয়েম লিখিনা আরও বললেন,‘আমি চাই, এখান থেকে যা শিখছি, সেটা আমার দেশের মানুষদের সেবায় লাগাতে। পাশাপাশি চীন-কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা আরও বাড়াতে কিছু করতে চাই।’
কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি শুধু এখানেই থেমে নেই। তারা আরও বড় পরিসরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা জোট গড়ে তুলছে, যাতে কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর চিকিৎসা খাতে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানালেন, ভবিষ্যতে এই জোটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মিলে চলবে কাজ, যার লক্ষ্য হবে একসঙ্গে দক্ষ চিকিৎসক গড়ে তোলা।
চীনের কুনমিংয়ে গড়ে ওঠা এই বন্ধুত্ব শুধু পড়াশোনার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি দুই দেশের ভ্রাতৃত্ব, সহযোগিতা আর পারস্পরিক উন্নয়নের এক অসাধারণ উদাহরণ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম