চীনের খেলনায় লেগেছে প্রযুক্তি ও নতুনত্বের হাওয়া। এখন চীনা বাজারের ট্রেন্ডি খেলনাগুলো দারুণ জনপ্রিয় বিশ্ববাজারে। বিশেষ করে চীনের সংস্কৃতি ও নতুন চরিত্রভিত্তিক খেলনাগুলো এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রোবট-চালিত স্মার্ট কারখানায় চলছে দিনরাত উৎপাদন।
বিশেষ করে চীনের মেধাস্বত্ত্ব আছে এমন খেলনার প্রতি বিশ্বে আগ্রহ বাড়ছে। এতে রপ্তানিও ক্রমাগত বাড়ছে।
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের শানথৌ শহরের ছেংহাই জেলা বিশ্বব্যাপী ‘চীনা খেলনার রাজধানী’ নামে পরিচিত। বিশ্বের মোট খেলনা বাজারের ৬০ শতাংশই এই অঞ্চল থেকে আসে। এ বছর রপ্তানির মৌসুম না হলেও, এখানকার কারখানাগুলো নিয়মিত অর্ডার পাচ্ছে এবং ব্যস্ত সময় পার করছে।
ছেংহাইয়ের একটি খেলনা প্রদর্শনী কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি ধরনের খেলনা প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ খেলনা নতুন, যা এই বছরই বাজারে এসেছে। প্রদর্শনী কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বাজারে নতুন খেলনার প্রতি আগ্রহ এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
স্লুবানের আন্তর্জাতিক বিপণন পরিচালক ছেন ইয়িহুয়াং জানালেন, ‘বিদেশি বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। তাই নতুন পণ্য তৈরি করা এবং দ্রুত বাজারে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চীনা ধাঁচের কুওছাও ও মেছা রোবটসহ নতুন খেলনা তৈরি করছি। নতুন পণ্য বাজারে আসার পর দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এবং আবার অর্ডার আসছে।’
নতুন খেলনা তৈরির পাশাপাশি চীনা কোম্পানিগুলো এখন নতুন বাজারেও প্রবেশ করছে। ছেংহাইয়ের কুয়াংতোং ইয়ুসিং টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি আগে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে খেলনা পাঠাত। এ বছর তারা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে নিজেদের সম্প্রসারিত করেছে। আবার পুরনো বাজারের ভোক্তাদের পছন্দের বিষয়টি জেনেও তারা পণ্য তৈরির কাজ করছে।
কুয়াংতোং ইয়ুসিং টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক সিয়ে ওয়েইছুন জানালেন, ‘এই বছর কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে প্রবেশ করে সেই ঘাটতি পূরণ করতে পেরেছি। দেখা গেছে—আমেরিকান ক্রেতারা জাহাজের খেলনা বেশি পছন্দ করেন, আর ইউরোপীয়রা গাড়ির মডেল নেন বেশি। তাই আমরা বাজারভেদে আলাদা পণ্য তৈরি করছি।’
শুধু বাজার সম্প্রসারণ নয়, চীনা খেলনা কোম্পানিগুলো সরবরাহ ব্যবস্থা ও গুদাম প্রযুক্তিও আধুনিক করছে। শানথৌয়ের একটি স্মার্ট গুদামে ২০টি রোবট ৮০ হাজার ধরনের খেলনার ব্লক বাছাই ও প্যাকেট করার কাজ করছে।
স্লুবানের এক কর্মকর্তা জানালেন, ‘রোবট ব্যবহারে ভুল কমে গেছে এবং কাজের নির্ভুলতা অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি রোবটগুলো ২৪ ঘণ্টা কাজ করে। এ কারণেও আমাদের উৎপাদনশীলতা আগের তুলনায় অনেক বেশি।’
চীনের কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ৯ মাসে চীন ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ৫০ বিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের উৎসব-সংক্রান্ত খেলনা, পুতুল এবং প্রাণীর আকৃতির খেলনা রপ্তানি করেছে।
বিশেষ করে চীনা সংস্কৃতি-নির্ভর খেলনাগুলো এখন আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন আকর্ষণের কেন্দ্র।
অন্যদিকে, চীনের এআই যুক্ত খেলনাও এখন নতুন করে আলোড়ন তৈরি করছে খেলনার মহাসমূদ্রে। আর এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পণ্যের অপেক্ষাকৃত কম দাম। অন্য কোনো দেশের তৈরি এআই যুক্ত যে খেলনাটি চারশ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, চীনে তৈরি একই ধরনের খেলনা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ ডলারে।
তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে এআই চালিত খেলনার বাজার ছিল ১৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। ২০৩৩ সালে এ বাজার ছাড়িয়ে যাবে ৬০ বিলিয়ন ডলার।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

