পারমাণবিক চুল্লি প্রযুক্তিতে চীনের প্রযুক্তিগত মাইলফলক

শনিবার,

০৮ নভেম্বর ২০২৫,

২৪ কার্তিক ১৪৩২

শনিবার,

০৮ নভেম্বর ২০২৫,

২৪ কার্তিক ১৪৩২

Radio Today News

পারমাণবিক চুল্লি প্রযুক্তিতে চীনের প্রযুক্তিগত মাইলফলক

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ৮ নভেম্বর ২০২৫

Google News
পারমাণবিক চুল্লি প্রযুক্তিতে চীনের প্রযুক্তিগত মাইলফলক

বিশ্বে এখন কার্যকর থোরিয়াম মল্টেন সল্ট রিঅ্যাক্টর বা টিএমএসআর আছে শুধু চীনে। চীনা প্রকৌশলীদের উদ্ভাবনী নকশা ও ধারণার হাত ধরে নিরাপদেই পরিচালিত হচ্ছে রিয়েক্টরটি। সম্প্রতি চীনের বিজ্ঞান একাডেমির শাংহাই ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স বা এসআইএনএপি জানায়, এই রিঅ্যাক্টরে প্রথমবারের মতো সফলভাবে থোরিয়াম থেকে ইউরেনিয়াম রূপান্তর প্রক্রিয়া অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, যা পারমাণবিক চুল্লির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত মাইলফলক।

রেডিওঅ্যাকটিভ পদার্থের সম্ভাব্য লিকেজ ঠেকাতে, বিজ্ঞানীরা রিঅ্যাক্টরের মূল অংশ, জ্বালানি সল্ট পাম্প এবং হিট এক্সচেঞ্জার — সবগুলোকে একটি মূল রিঅ্যাক্টর ভেসেলের ভেতর সংযুক্ত করে তৈরি করেছেন একটি সমন্বিত কাঠামো। এতে পারমাণবিক চুল্লির নিরাপত্তাও বেড়েছে কয়েক গুণ।

এসআইএনএপির পরিচালক তাই চিমিন জানালেন, ‘হিট এক্সচেঞ্জার রিঅ্যাক্টরের ভেতরে থাকায় গলিত লবণ কুল্যান্ট রিঅ্যাক্টরের বাইরে আসে না। এ ছাড়া রিঅ্যাক্টরের বাইরে আরেকটি সুরক্ষা কন্টেইনার আছে। ফলে রেডিওঅ্যাকটিভ পদার্থ লিক হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।’

মল্টেন সল্ট রিঅ্যাক্টর হলো চতুর্থ প্রজন্মের উন্নত নিউক্লিয়ার শক্তি প্রযুক্তি। এতে উচ্চ তাপমাত্রার গলিত লবণকে শীতলিকরণ উপাদান বা কুল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এর কিছু সুবিধা হলো এতে পানি ছাড়াই কুলিং সম্ভব এবং এতে উচ্চ চাপ তৈরি হয় না, তাই বিস্ফোরণের ঝুঁকিও কম। আবার এতে উচ্চ তাপমাত্রার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব এবং এ রিঅ্যাক্টর নিজেই নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারে।

চীনা গবেষকরা জানান, যেহেতু এটি বায়ুমণ্ডলীয় চাপেই চলে, তাই উচ্চচাপে চালিত রিঅ্যাক্টরের মতো ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি নেই। আর মল্টেন সল্ট কুল্যান্ট উচ্চ তাপেও রিঅ্যাক্টরের মূল অংশ গলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

এসআইএনএপির উপ পরিচালক লি ছিংনুয়ান জানালেন, ‘যদি কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটেও থাকে, তবে এতে খুব সামান্য তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হতে পারে। কারণ স্বাভাবিক কাজ চলাকালেই এসব উপজাত দ্রব্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত থাকে।’

এই অর্জন বৃহৎ পরিসরে থোরিয়াম ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ পরমাণু শক্তি উৎপাদনের পথও সুগম করেছে।

তাই চিমিন আরও বললেন, ‘এটি বিশ্বের প্রথম রিঅ্যাক্টর যেখানে থোরিয়াম ব্যবহার করে থোরিয়াম-ইউরেনিয়াম রূপান্তর সম্ভব হলো। এটি প্রমাণ করলো, আমাদের থোরিয়াম সম্পদ ব্যবহারযোগ্য ও টেকসই। ভবিষ্যতে ডেমো রিঅ্যাক্টর ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের ভিত্তিও তৈরি হলো।’

চীনের এই প্রযুক্তি সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, উচ্চ-তাপমাত্রার শক্তি সঞ্চয়, হাইড্রোজেন উৎপাদন, কয়লা ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি কম-কার্বন নির্গমনের সমন্বিত সিস্টেম গড়ে তুলতে পারে।

প্রকল্পটির লক্ষ্য, ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডেমো রিঅ্যাক্টর তৈরি এবং সেটাকে বাস্তবে ব্যবহারের পর্যায়ের নিয়ে আসা।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের