মঙ্গলবার,

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

২৫ ভাদ্র ১৪৩২

মঙ্গলবার,

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

২৫ ভাদ্র ১৪৩২

Radio Today News

বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার পর নেপাল: ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাড়ছে জেন-জি’র ক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৭:৪৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Google News
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার পর নেপাল: ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাড়ছে জেন-জি’র ক্ষোভ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞার কারণে নেপালে সূত্রপাত হয় বিক্ষোভের। সেই বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ঘটিয়েছে। অভিযোগ ছিল সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন দমনে গুলির ব্যবহার এবং ১৯ জনের মৃত্যু বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ায়। ফলশ্রুতিতে মঙ্গলবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।

নেপালে বিক্ষোভগুলো প্রাথমিকভাবে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ অনেকেই দেখেছিলেন, কেবল তরুণরা ইনস্টাগ্রাম বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে না পারার কারণে সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে আন্দোলনে নামেন। এটি দ্রুত আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এটি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে তরুণ নাগরিকদের বিক্ষোভে নেমে আসার কারণে সরকারের আরও একটি বড় বিপর্যয়ের উদাহরণ।

প্রথমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকে শুরু হয়, কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী জেনারেশন-জি গোষ্ঠীগুলো দুর্নীতির ইস্যুতে সরকার পরিবর্তনের দাবি জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনটি সহিংস হয়ে ওঠে।

আন্দোলনকারীরা দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের ভেতর থেকে এবং তার বাইরে থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অনেকে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভকে অনুপ্রেরণার মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

সরকারের অভ্যন্তরে দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য অনুঘটক হয়ে উঠেছে টিকটকের নানা ভিডিও। কারণ, প্ল্যাটফরমটি গত সপ্তাহে নিষিদ্ধ ২৬ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের মধ্যে ছিল না।

নেপাল সরকার বলেছিল, তারা বেশিরভাগ বিদেশি মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে রাজস্ব এবং আরও নিয়ন্ত্রণ চেয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করছে।

বাংলাদেশ অভ্যুত্থানের এক বছর পর

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর এই পদত্যাগের অর্থ হলো- ২০২২ সাল থেকে ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে তৃতীয় দেশ হিসেবে নেপালে তরুণদের দ্বারা সরকারের পতন দেখা গেল, যা একটি বড় পরিবর্তন। আর এসব বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল ‘জেনারেশন জেড। যাদের জন্ম মূলত বিংশ শতাব্দীর শেষে এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশেও একই রকম ক্ষোভ দেখা যায়, যখন সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।

শ্রীলঙ্কার তরুণদের বিক্ষোভ
উপমহাদেশের দক্ষিণে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতির ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখা গেছে। নেতৃত্ব তরুণ ছিল কিন্তু বিদ্যমান দল বা ব্যবস্থা থেকে আকৃষ্ট ছিল না। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির ফলে খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতি দেখা দেয় এবং প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ সামগ্রিক সংকটে পড়ে সাধারণ মানুষ।

অর্থনীতির অব্যবস্থাপনা একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে এই সংকট জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিলে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং পরিবারের অন্যান্য শাসকরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর দেশটিতে ২০২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অনুরা কুমারা দিশানায়েকের নেতৃত্বে বামপন্থী ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার জোট ক্ষমতায় আসে।

নেপালের পরবর্তী শাসন কী হবে?

নেপালে শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের মতো বিক্ষোভকারীরা দলীয় সম্পৃক্ততার দিক থেকে অরাজনৈতিক বলে দাবি করেছে। ফলে, তাদের এবং তাদের দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথ জটিল হতে পারে। এতোমধ্যে দেশটির মন্ত্রীদের নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। দেশব্যাপী নিরাপত্তার দায়িত্বও নিয়েছে তারা।

নেপালের পোখরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক যোগ রাজ লামিছানে এএফপিকে বলেন, ‘তরুণদের হতাশা এবং কর্তৃত্বের প্রতি তাদের অবিশ্বাসের কারণে বিক্ষোভগুলো তীব্র হয়েছে। কারণ, তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে দূরে সরে গেছে বলে মনে করে। অভিযোগগুলি আরও গভীরে প্রসারিত।’  এদিকে নেপালের রাষ্ট্রপতি পাউডেল নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারত ইতোমধ্যে সহিংসতা এবং বিক্ষোভকারীদের হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। নেপালের সঙ্গে তাদের বেশিরভাগ উন্মুক্ত সীমান্তে নজরদারিও বাড়িয়েছে। তবে, ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ভারতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার কোনো কারণ দেখছেন না।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের