করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বহু সংখ্যক অতিথি নিয়ে মদ-পার্টিই কাল হতে পারে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের জন্য। ইতোমধ্যে বিষয়টি স্বীকার করে ওই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত ও দু:খ প্রকাশ করেছেন বরিস। তবে এতেই শেষ রক্ষা হচ্ছে না। এখন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে দল ও দলের বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে স্কটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সিনিয়র নেতা ডগলাস রোজ বলেছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে সেটি শুভ নয়। পার্টির পক্ষ থেকে দোষ স্বীকার করে এখন তাকে সরে যাওয়া উচিত। বরিস জনসনের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন উইলিয়াম র্যাগ, ক্যারোলিন নোকস এবং রজারও।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রায় দেড় বছর আগের সেই পার্টি নিয়ে বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, ২০২০ সালের ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে আয়োজিত পার্টি নিয়ে আমার এবং সরকারের ওপর জনগণের ক্ষোভ আমি অনুভব করতে পারছি। এটি স্বাভাবিক। কারণ, যাদের কাজ আইন প্রণয়ন করা- তারাই যদি আইনভঙ্গ করেন, তাহলে তা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাবসহ ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা বরিস জনসনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে স্কটিশ টরি নেতা ডগলাস রস-সহ উইলিয়াম র্যাগ, ক্যারোলিন নোকস এবং রজার গেলের মতো ব্রিটিশ এমপিরা বেশ জোরেশোরেই জনসনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে টরি নেতা ডগলাস রস জানিয়েছেন, বুধবার হাউস অব কমন্সে এমপিদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার পর বরিস জনসনের সঙ্গে তার ‘কঠিন কথপোকথন’ হয়েছে। তার ভাষায়, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যে নিয়ম চালু করেছিলেন, সেটি ভঙ্গ করায় পদ ছাড়তে হবে বরিস জনসনকে।
করোনা মহামারির কারণে আরোপ করা লকডাউনের মধ্যে আয়োজিত পার্টির যে ঘটনাটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সেটি ২০২০ সালের মে মাসের। যুক্তরাজ্যজুড়ে সেসময় লকডাউন চলছে। সংক্রমণ রুখতে জনসমাবেশ ও পার্টিসহ সবকিছুর ওপরই সেসময় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। সেই বছর ২০ মে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ৪০ জনকে নিয়ে গার্ডেন পার্টি করেছিলেন বরিস জনসন।
সম্প্রচারমাধ্যম আইটিভি জানিয়েছে, পার্টিতে অংশ নিতে ইমেইলের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয় অতিথিদের। সেই ইমেল তারা দেখেছে। ‘ব্রিং ইয়োর ওন অ্যালকোহল’ (নিজের মদ নিজে আনো) গার্ডেন পার্টির আয়োজন করেছিলেন জনসন।
অবশ্য করোনা সংক্রমণ রুখতে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সে সময় সর্বোচ্চ মাত্র দু’জন বাড়িতে মিলিত হতে পারতেন। বার, রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। আর সেই সময়েই কি না জনসন এই পার্টি করেন।
প্রধানমন্ত্রী জনসনের প্রিন্সিপাল প্রাইভেট সেক্রেটারি মার্টিন রেনল্ডস এই ইমেইল ১০০ জনেরও বেশি কর্মীকে পাঠিয়েছিলেন। সেই ইমেইলে বলা হয়েছিল, ‘ভয়ংকর ব্যস্ত সময়ের পর সুন্দর আবহাওয়ার সুযোগ নিন। আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে ১০ নম্বরের বাগানে সন্ধ্যায় জড়ো হবো। দয়া করে ৬টার সময় আসবেন এবং নিজের মদ নিজে নিয়ে আসবেন।’
আইটিভি জানিয়েছে, অতিথিদের সবাই সেদিন উপস্থিত না হলেও জনসন তার স্ত্রীসহ মোট ৪০ জনকে নিয়ে সেদিন পার্টি করেছিলেন। অবশ্য জনসনের বিরুদ্ধে লকডাউনের বিধিভঙ্গের অভিযোগ নতুন নয়। ২০২০ সালে তিনি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিক পার্টি করেছেন বল অভিযোগ রয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/এমএস
