কোলেস্টেরলের কথা শুনলেই সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের কথা মনে আসে। কিন্তু যা এখন এই সমস্যায় ভুগছে বাচ্চারাও (high cholesterol in kids), সেটাই চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। পুনের সূর্য মাদার অ্যান্ড চাইল্ড সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক (শিশু বিশেষজ্ঞ) এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সাজিলি মেহতা সম্প্রতি জানিয়েছেন, বাচ্চাদের মধ্যে কোলেস্টেরলের (cholesterol in children) সমস্যা ক্রমশই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই সমস্যা এখন শুধু কোনও বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে প্রবণতা। ডা. মেহতার মতে, আধুনিক জীবনযাত্রা (sedentaryy lifestyle), বসে থাকা অভ্যাস এবং অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার (fast food intake) কারণে শিশুদের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে।
ডাঃ মেহতা জানান, ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকি জেলায় একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ছিল ১৯০ mg/dL-এরও বেশি। শুধু ভারতে নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ৬ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রায় ২১ শতাংশ শিশুর কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক পাওয়া গেছে।
কেন বাড়ছে শিশুদের কোলেস্টেরল?
ডা. মেহতা বলেন, “প্রসেসড খাবার যেমন চিনিযুক্ত পানীয়, ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়াই এর কারণ। আনহেলদি ফ্যাট এবং মাত্রাতিরিক্ত চিনি, জাঙ্ক ফুড শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ফলে শিশুদের দেহে ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ দ্রুত বাড়ছে।”
এছাড়াও, মোবাইল ও কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটানোয় শিশুরা এখন শারীরিক পরিশ্রম কম করছে, ফলে ক্যালোরি খরচও কমছে।
তবে শুধু খাদ্যাভাসই যে সবসময় দোষী, তা নয়। অনেক সময় এটি জিনগত কারণেও হতে পারে। পরিবারে যদি হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া বা হাই কোলেস্টেরলের প্রবণতা থাকে, তবে জিনগত কারণেই শিশুরও সেই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডা. মেহতা আরও জানান, শিশুদের মধ্যে হঠাৎ ওজন পরিবর্তন, ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তা সতর্ক সংকেত হতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অবহেলা করলে কী হতে পারে?
যদি বাচ্চাদের হাই কোলেস্টেরলের চিকিৎসা দ্রুত শুরু না হয়, তাহলে ধীরে ধীরে ধমনিতে চর্বি জমে ব্লকেজ তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক বা ওবেসিটি, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ডা. মেহতার কথায়, “অভ্যাস না বদলালে কৈশোরেই ধমনিতে ব্লকেজ শুরু হতে পারে। এটি ভবিষ্যতের হৃদরোগ, স্থূলতা ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অসুখের পথ খুলে দেয়।”
অভিভাবকদের কী করা উচিত?
সুষম খাদ্যাভাস: সবুজ শাকসবজি, ফল, হোল গ্রেইন ও ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। ভাজাভুজি ও অতিরিক্ত মিষ্টি কমাতে হবে।
রোজ নিয়ম করে শারীরিক কসরত: প্রতিদিন অন্তত ৬০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, খেলাধুলা ইত্যাদি রোজের রুটিনে রাখা উচিত।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: পরিবারে যদি হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তবে নিয়মিত কোলেস্টেরল টেস্ট করানো আবশ্যক।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

