
জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (অডিটবিহীন) বিমানের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯৩৭ কোটি টাকা। লন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. মো. শফিকুর রহমান আজ বাসসকে বলেন, ‘এই মাইলফলক বিমানের আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক এয়ারলাইন্সে রূপান্তরের প্রতিফলন, যা জাতীয় গৌরবও বহন করছে।’
তিনি দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কার্যকর কৌশল, যাত্রীসেবা উন্নয়নের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং যাত্রী ও গ্রাহকদের বিশ্বাস ও সমর্থন এ সাফল্যের কারণ বলে উল্লেখ করেন।
রহমান জানান, আন্তর্জাতিক বিক্রয় বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া, কার্যকর প্রচারাভিযান, ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বৃদ্ধির কারণে ওয়েব বিক্রি বেড়েছে। এর ফলে গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) খরচ কমে গিয়ে মুনাফা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও জানান, টিকিট রিজারভেশন ৭২ ঘণ্টার বেশি রাখার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনিয়ম কমিয়েছে এবং আসন দখল হার (সিট অকুপ্যান্সি) বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘খালি আসন নিয়ে বিমান ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগ এখন আর নিয়মিত নয়। বিক্রয় কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
বিমান জানিয়েছে, এ অর্জন আগের সর্বোচ্চ ২০২১-২২ অর্থবছরের ৪৪০ কোটি টাকার মুনাফার দ্বিগুণেরও বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের আয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৩১.৩৭ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরুর পর বিমান এখন পর্যন্ত ২৬ অর্থবছরে মুনাফা করেছে।
২০০৭ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের পর গত ১৮ বছরে বিমান মোট ৫৮৯ কোটি টাকার মুনাফা করেছে, যা বৈশ্বিক বিমান শিল্পের নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এর দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার প্রমাণ বহন করে।
বর্তমানে বিমানের বহরে রয়েছে ২১টি উড়োজাহাজ: চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮-৪০০।
নিজস্ব রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা ু লাইন মেইনটেন্যান্স থেকে শুরু করে বড় ধরনের চেক পর্যন্ত ু বিমানের খরচ সাশ্রয়, দ্রুত সেবা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমান ৩৪ লাখ যাত্রী ও ৪৩,৯১৮ টন কার্গো পরিবহন করেছে, ক্যাবিন ফ্যাক্টর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিমান সর্বকালের সর্বোচ্চ মাসিক টিকিট বিক্রির রেকর্ডও গড়েছে।
রহমান জানান, ইতালি ও ইউরোপের অন্যান্য শহরে বিক্রি বাড়াতে ইতোমধ্যেই আইটিএ এয়ারওয়েজের সঙ্গে একটি বিশেষ প্রোরেট অ্যাগ্রিমেন্ট (এসপিএ) হয়েছে। ‘এই চুক্তির ফলে এখন বিমানের যাত্রীরা রোম হয়ে সব ইতালীয় গন্তব্য এবং ইউরোপের বড় শহরগুলোতে আইটিএর সঙ্গে ইন্টারলাইন সুবিধায় যেতে পারবেন,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, তুর্কি এয়ারলাইন্স এবং হাইনান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আরও দুটি বড় এসপিএ চুক্তির কাজ চলছে।
এছাড়া বিমান একটি বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) ট্রাভেল এজেন্ট পোর্টাল চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ইতালি, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও জাপানসহ বিভিন্ন বাজারে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের সুযোগ বাড়াচ্ছে।
‘এসব উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে বিক্রি ও আয় আরও বেড়ে যাবে,’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন রহমান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহর আধুনিকায়ন, লাভজনক আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণ এবং গ্রাহকসেবা উন্নয়নের জন্য বিমানকে প্রশংসা করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
এয়ারলাইন্সটি জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন ব্যবস্থাপনার বিচক্ষণ আর্থিক নিয়ন্ত্রণ, সম্পদের দক্ষ ব্যবহার ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ রেকর্ড মুনাফা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রহমান বলেন, জনপ্রিয় গন্তব্যে রুট সম্প্রসারণ, যাত্রীসেবায় ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করা এবং কার্গো কার্যক্রম শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন্সে পরিণত হওয়া, সর্বোচ্চ মানের সেবা, নির্ভরযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
বর্তমানে বিমান প্রায় ২৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে আবুধাবি, ব্যাংকক, দাম্মাম, দিল্লি, দোহা, দুবাই, গুয়াংজু, জেদ্দা, কাঠমান্ডু, কলকাতা, কুয়ালালামপুর, কুয়েত, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, মদিনা, মাসকাট, টরন্টো, রিয়াদ, শারজাহ এবং সিঙ্গাপুর।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম