বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনঢ় অবস্থান নিয়েছেন তারা। রোববার সকাল থেকে তাদের এই কর্মসূচি শুরু হয়। এর ফলে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় এক কোটি শিশু শিক্ষার্থী।
একইসঙ্গে ৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। আজ রোববার সংগঠনের পক্ষে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষকরা ১৫ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা জানালেও, শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির সময় পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই কর্মবিরতি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সহকারী শিক্ষকরা। তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— দশম গ্রেডে বেতন ও ভাতার দাবি, পদোন্নতির কাঠামো পুনর্বিন্যাস, এবং শিক্ষক মর্যাদা সংক্রান্ত নীতিমালা সংস্কার।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি, অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের হামলাসহ ৫ জন শিক্ষককে রাজধানীর শাহাবাগ থানায় ১৮ ঘণ্টা আটক করে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ সমকালকে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা আহত হয়েছেন, কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
তিনি আরও জানান, দাবি আদায় না হলে প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিপর্যয়
শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ রাখায় বিদ্যালয়ে গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ডিসেম্বরের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এমন সময়ে কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
রাজধানীর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এমদাদ উল্লাহ বলেন, আমার মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, এবার বৃত্তি পরীক্ষা দেবে। এখন ক্লাস বন্ধ থাকায় প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো ফল করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
বছরের দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতি
চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কর্মবিরতিতে গেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। মে মাসেও তারা টানা কয়েক ধাপে কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। পরে সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফেরেন, তবে সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা আবুল কাশেম সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দশম গ্রেডের দাবি জানিয়ে আসছি। পরে সরকার ১১তম গ্রেডের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করেনি। তাই বাধ্য হয়েই আবার আন্দোলন করছি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

