
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের গ্রেফতারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিলম্বে হলেও যে এতদিন পর তার (এবিএম খায়রুল হক) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার (অন্তর্বর্তী), সেজন্য আমি সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
‘‘সঠিকভাবে তার তদন্ত হবে সব বিষয়গুলোর এবং সঠিকভাবে তার বিচার কাজ সম্পন্ন হবে, সেটাই আমরা আশা করি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাতে চাই, বাংলাদেশের একজন বড় শত্রু, যিনি বাংলাদেশের একটা বিশাল ক্ষতি করেছেন—একটা বিরাট পদে থেকে এবং সেই পদে থেকে তিনি বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করার ব্যাপারে দায়িত্বে ছিলেন, সেখানে তিনি সেই জায়গায় প্রতারণা আশ্রয় নিয়েছেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সাহেব।”
‘‘তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত যে রায় দিয়েছিলেন সেটা এবং পরবর্তীকালে পূর্ণাঙ্গ যে রায়—যাতে আকাশ ও পাতাল তফাৎ ছিল। যে সংক্ষিপ্ত রায়টা দিয়েছিলেন, সেটাও আমরা মনে করি এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক সংকট তৈরিতে নিঃসন্দেহে খায়রুল হক দায়ী ছিলেন।’’
তার কী ধরেন শাস্তি চান জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এর জন্য তিনি শতকরা একশত ভাগ দায়ী।”
‘‘তবে এটা তো (শাস্তির বিষয়টা) আমার বলা ঠিক হবে না, আইনগতভাবে যে বিধানগুলো আছে, সেই বিধানগুলো দেখে তাকে প্রসিকিউট করে, সেই বিধান নিশ্চিত করতে হবে। তবে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে—যাতে ভবিষ্যতে কেউ ওই জায়গাটায় বসে, সেই জায়গা ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে না পারে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আরও যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত—তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ওনার (এবিএম খায়রুল হক) রায়ের পরে যেটা হয়েছে—আমাদের তত্ত্বাবধায়ক বিধানটা বাতিল হলো। যেটার কারণে বাংলাদেশে পরবর্তীকালে যত রকমের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আর আমরা মনে করি বিচার বিভাগ সবচেয়ে বড় জায়গা, যেখানে মানুষের আস্থা থাকে, সেই আস্থার জায়গাটা উন ধ্বংস করেছেন শুধু তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা সেই কারণে, যেটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে বলে আমরা মনে করি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি কার্জন হলের উল্টো দিকে হাইকোর্টের পাশে শিশু একাডেমির ভবনটি ভেঙে ফেলার কথাবার্তা চলছে, বা এই ধরনের প্রক্রিয়া বা প্রস্তাব নেওয়া হচ্ছে। আমরা এটার বিরোধিতা করি।”
‘‘বিরোধিতা করি এ কারণে যে এটা শিশুদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠান, যেটার মাধ্যমে শিশুদের বিভিন্ন রকমের কার্যক্রম, তাদের (শিশুদের) গঠন, তাদের বেড়ে ওঠা, তাদের মনমানসিকতা তৈরি করা, তাদের এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ তৈরি করা প্রভৃতি বিষয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং তিনিই প্রথম শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটার সারা দেশে শাখা রয়েছে।’’
ফখরুল বলেন, ‘সুতরাং, এই প্রতিষ্ঠাকে এখান থেকে সরানোটা আমি মনে করি একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না এবং এ ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য— আমরা চাই না শিশু একাডেমি ভবনটি সেই জায়গা থেকে স্থানান্তরিত করা হোক বা অন্য জায়গা দেওয়া হোক। এটা আমার মনে হয় জাতি গঠনের ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনসহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তিনি উত্তরার দিয়াবাড়ির তারারটেকের কাছে একটি পারিবারিক কবরস্থানে যান। এখানে এক পরিবারের তিন শিক্ষার্থী শায়িত আছে। বিএনপি মাইলস্টোন স্কুলের তিন শিক্ষার্থী আরিয়ান, হুমায়ূরা ও বাপ্পির পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর সেখানে আরও দুই শহীদ জুনায়েদ ও শারিয়ার কবরও জিয়ারত করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত্বনা জানান।
এ সময় মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর, সদস্য সচিব কফিল উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম