টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) জেলার তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এদিন দেশের সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগের দিন শুক্রবার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা দুই দিনের শৈত্যপ্রবাহ ও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় যশোরসহ আশপাশের এলাকায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের দাপটে জনজীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। এর প্রভাব পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ, কৃষিকাজ ও পশু-পাখির ওপরও।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অনেক এলাকায় ঠান্ডার অনুভূতি বজায় থাকবে।
প্রচণ্ড শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। মোটা জ্যাকেট, সোয়েটার ও মাফলারে ঢেকে মানুষজনকে কাঁপতে কাঁপতে পথ চলতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন, তাদের অনেকেরই কাজ মিলছে না।
যশোর শহরের লালদীঘি পাড়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ’ মানুষ শ্রম বিক্রির আশায় জড়ো হন। কিন্তু প্রচণ্ড শীতে সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপরও কাজ না পেয়ে অনেককে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ কাজের আশায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন।
বাহাদুরপুর এলাকার শ্রমজীবী সুজন মিয়া বলেন, ‘শীতে একদিন কাজ পাই, তিনদিন পাই না। গত এক সপ্তাহ ধরে তেমন কাজ হচ্ছে না। ভোরবেলা এসে বসে থেকেও কোনো লাভ হচ্ছে না।’
শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মো. মিনহাজ বলেন, ‘শীতে বাইরে দাঁড়ানোই কষ্টকর। তারপরও কাজের খোঁজে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু ঠিকমতো কাজ মিলছে না।’
শংকরপুর এলাকার শ্রমজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের রঙের কাজ করি। কাজের সন্ধানে বসে আছি, কিন্তু এখনো কাজ পাইনি। শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। পেটের দায়েই বের হয়েছি।’
রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক হানেফ আলী বলেন, ‘শীতে মানুষ ঘর থেকে কম বের হয়। যাত্রী পাচ্ছি না, আয়ও কমে গেছে। খুব কষ্টে দিন কাটছে।’
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্বর, সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। সারাদিন গরম পোশাক পরে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে মানুষজনকে। সন্ধ্যার পর শহরের বিভিন্ন এলাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, উষ্ণ খাবার গ্রহণ ও গরম পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

