পৃথিবী বর্তমানে যতটা তাপ মহাকাশে বিকিরণ করছে, তার তুলনায় অনেক বেশি তাপ নিজের মধ্যে ধরে রাখছে। এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতি আরও তীব্র হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় উঠে এসেছে, পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যহীনতা বা ‘এনার্জি ইমব্যালেন্স’ এখন এক বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই তাপীয় ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পেছনে বায়ুদূষণের চেয়ে মেঘের চরিত্রগত পরিবর্তনের প্রভাব অনেক বেশি। সাধারণত মেঘ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেঘের এই প্রতিফলনক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় বেশি সৌরশক্তি সরাসরি পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছাচ্ছে।
গবেষকদের মতে, ভূপৃষ্ঠের ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মেঘের গঠন ও আচরণে পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাব দুই গোলার্ধে ভিন্নভাবে দেখা যাচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে বায়ু তুলনামূলক পরিষ্কার হওয়ায় অ্যারোসলের ঘনত্ব কমেছে, ফলে সেখানে সূর্যালোক বাধাহীনভাবে প্রবেশ করছে। অন্যদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে দাবানল ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে অ্যারোসলের পরিমাণ বেড়েছে, যা মেঘকে আরও প্রতিফলক করে ওই অঞ্চলকে তুলনামূলক ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করছে।
এই বিপরীতমুখী প্রভাবের ফলে বৈশ্বিকভাবে অ্যারোসলের সামগ্রিক প্রভাব প্রায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষক দলের প্রধান, মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমোস্ফিয়ারিক সায়েন্স বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী চ্যানইয়ং পার্ক বলেন, এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত কারণ বুঝতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও জানান, দূষণ কমে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে—এমন ধারণার পরিবর্তে এখন ভূপৃষ্ঠের উষ্ণায়ন ও মেঘের পরিবর্তনের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পৃথিবী প্রতি দশকে প্রতি বর্গমিটারে প্রায় শূন্য দশমিক পাঁচ ওয়াট হারে অতিরিক্ত তাপ শোষণ করেছে। যদিও দীর্ঘমেয়াদে গ্রিনহাউস গ্যাসই জলবায়ু পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি, তবে মেঘের এই পরিবর্তন উষ্ণায়নের গতি আরও দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সূত্র: এনডিটিভি
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

