শনিবার,

১৯ জুলাই ২০২৫,

৪ শ্রাবণ ১৪৩২

শনিবার,

১৯ জুলাই ২০২৫,

৪ শ্রাবণ ১৪৩২

Radio Today News

গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল: সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ১৮ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২০:০০, ১৮ জুলাই ২০২৫

Google News
গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল: সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা

সাবেক আইজিপি মো: আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জে এত বড় ঘটনা ঘটতো না। গোয়েন্দা ব্যর্থতাই গোপালগঞ্জের ঘটনার জন্য দায়ী। জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসন করার জন্য চক্রান্ত চলছে, যাতে নির্বাচন পিছিয়ে যায়। গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই উদাহরণ। পুলিশের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। 

শুক্রবার (১৮ জুলাই ২০২৫) ঢাকার এফডিসিতে মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি মো: আশরাফুল হুদা এসব কথা বলেন।

আইজিপি আরও বলেন, সোহাগ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। শহরের মাঝে ঘটনা ঘটে যাওয়ার দুই দিন পরে ভাইরাল হবার পর পুলিশের তৎপর হওয়াটা দুঃখজনক। এখানে পুলিশের কোন গাফিলতি থাকলে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। মব ভায়োলেন্স শুধু ভুক্তভোগিরাই করে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কেউ কেউ টার্গেট করে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার জন্য এ ধরনের মব ভায়োলেন্স করছে। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশটা মবের মুল্লুকে পরিণত হচ্ছে। সমাজের ক্যান্সার মব সন্ত্রাস। মব কালচার গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। এটা বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক বাড়তে থাকবে। অফিস—আদালত, রাস্তা—ঘাট, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ট্রেন স্টেশন সর্বত্র ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করবে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জাতি হিসেবে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। মবের উৎপাত বাড়তে থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে ভয় পাবে। দেশিয় বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হবে। আজকে মব নিয়ে যে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা তা অতীতের ধারাবাহিকতা বললে ভুল হবে না। 

তিনি আরও বলেন, ১/১১’র সময় লগি—বৈঠা দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মাধ্যমে মবের বীজ রোপিত হয়েছিল। সেদিন রাজধানীর পল্টনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। তার বিচার এখনো হয়নি। আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে সংঘটিত সকল মব সন্ত্রাসের যেমন বিরোধীতা করছি, একইভাবে জুলাই বিপ্লবের পর ঘটা চাঁদাবাজী, দখলবাজী, লুটতরাজ করার উদ্দেশ্যে যেসব মব তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোও প্রত্যাখ্যান করি। চোর—ডাকাত, ছিনতাইকারীর পাশাপাশি মবের শিকার হচ্ছেন রাজনীতিবিদ, আমলা, আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সর্বত্র মব জাস্টিসের নামে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মাজার ভাঙ্গা, বাউল গান বন্ধ করা, জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলা কাঙ্খিত নয়। মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বৃথা যাবে। 

বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিচার ব্যবস্থার জটিলতা, রাজনৈতিক আশ্রয়—প্রশ্রয়, সামাজিক অবক্ষয়ের ফলেই মব সন্ত্রাস বাড়ছে। মব জাস্টিস তথা মব সন্ত্রাস প্রতিকারে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে নিম্নের ৭ দফা সুপারিশ করা হয় : ১) মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করা ২) বিচার ব্যবস্থার জটিলতা দূর করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরিহারের মাধ্যমে দক্ষ, স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা ৩)  জনগণের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গড়ে তুলে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ৪) গুজবের ওপর ভিত্তি করে কোনভাবেই যাতে মব সন্ত্রাস ছড়াতে না পারে তার জন্য সোস্যাল মিডিয়ার ওপর সরকারের নজরদারী বাড়ানো। কাট পেস্ট করে ঘৃণা ছড়ানোর লক্ষ্যে তৈরি করা মিথ্যা কনটেন্টগুলি অপসারণে বিটিআরসিকে আরো তৎপর হওয়া ৫) আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে মব সন্ত্রাসকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয়ার অঙ্গীকার করা ৬) মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সুশিক্ষার মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনা ৭) মব জাস্টিস প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে আরো বেশি এনগেজ করা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ” শীর্ষক ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, সাংবাদিক আহমেদ সরওয়ার, সাংবাদিক এম এম বাদশাহ্ ও সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মিশন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের