
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের কারণে হঠাৎ করেই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। একইসঙ্গে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত এবং ঘাট সংকটে দৌলতদিয়া ঘাটে ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। ফলে পণ্যবাহী ট্রাকের ফেরির নাগাল পেতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত দীর্ঘ তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আটকে পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাক। এছাড়া অন্তত দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে যাত্রীবাহী বাসের সারি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি পণ্যবাহী ট্রাকের ফেরির নাগাল পেতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। অপরদিকে প্রতিটি যাত্রীবাহী বাসের ফেরির দেখা পেতে অন্তত আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে পাট বোঝাই করে সিরিয়ালে আটকে থাকা ট্রাকচালক মো. মন্টু মিয়া (৫৫) বলেন, সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছেন। এখনও পর্যন্ত ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাননি। কখন ফেরির নাগাল পাব জানি না। কেউ বলতেও পারছেন না।
মহেশপুর থেকে আসা ঢাকাগমী রয়েল পরিবহনের যাত্রী মো. জহুরুল ইসলাম (৪০) বলেন, দুপুর ১২টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি। আড়াই ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করে ফেরির দেখা পাইনি। কখন যে আমাদের বাসটি ফেরির নাগাল পাবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বাসে অসুস্থ ব্যক্তির পাশাপাশি বিদেশগামী যাত্রীও রয়েছেন। বাধ্য হয়ে বাস থেকে নেমে অনেকে অন্য উপায়ে গন্তব্যে ছুটছেন।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়ায় ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ১, ২, ৫ ও ৬নং ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ৩, ৪ ও ৭নং ফেরি ঘাট দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। পলি জমে যাওয়ায় ৭নং ঘাটের চ্যানেলে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হওয়া গত ২৩ আগস্ট থেকে ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনে ফেরির আঘাতে প্লেট ভেঙে গেছে। ফলে রোববার রাত ১২টা থেকে ঘাটটি বন্ধ করে মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তে শুধুমাত্র ৩ নম্বর ফেরিঘাট চালু রয়েছে। এতে ঘাট সংকটে ফেরি লোড-আনলোড ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে ভরা বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত রয়েছে। ফলে ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। চলাচলকারী ফেরিগুলোর প্রতিটি ট্রিপে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগছে। এ কারণেও যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আলিম দাইয়ান বলেন, সচল দুটি ঘাটের মধ্যে একটি চালু। ফলে ঘাট সংকটে নদী পারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়েছে। বিকল ঘাটের পন্টুনটি মেরামত কাজ চলছে, আশা করি খুব দ্রুতই ঘাটটি সচল হয়ে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ফরিদপুরে চলমান আন্দোলনের কারণে দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহারকারী যানবাহনের পরিমাণ হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ঘাট সংকট ও নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে, তাই ঘাট এলাকায় যানবাহনের জট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এ নৌরুটে ১০টি ফেরি চলাচল করছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম