
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির শাইখুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, ভারতীয় সংবিধানের মূলনীতির ভিত্তিতে প্রণীত ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী ৭২-এর সংবিধান বাংলার মাটিতে চলতে দেওয়া হবে না।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় স্থানীয় পৌরপার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গোপালগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা জুলুম ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করলাম। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেই মুক্তিযুদ্ধের সুফল তথা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারল না।
বরং আমাদের পার্শ্ববর্তী একটি রাষ্ট্র আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ফসলকে ছিনতাই করে মানুষের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ৭২-এর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি ভারতীয় আধিপত্যবাদের সংবিধান তৈরি করে। এই সংবিধানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে।’
খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘কলকাতার দাদাবাবুদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি মুসলিম জাতিরসত্ত্বার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা লড়াই করেছে। এ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান নামে মুসলিম জাতিসত্ত্বার এক জনপদের জন্ম হয়েছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের জীবন, রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলার মানুষ পিণ্ডির আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে।’
মামুনুল হক বলেন, ‘আগামী গোপালগঞ্জ হবে ইসলামের গোপালগঞ্জ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গোপালগঞ্জ। আমি আজ সেই সব বীর শহীদদের স্মরণ করছি, যারা পিলখানা, শাপলা চত্বর ও ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়েছেন, যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আজ বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী শক্তি বিনাশ হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ আগামী দিনে ইনসাফভিত্তিক একটি সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছে।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের ভিত্তিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে। কিন্তু সেই উচ্চকক্ষ কিভাবে গঠিত হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল একমতে আসতে পারেনি। আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। জুলাই বিপ্লবে যাদের সন্তানরা রক্ত দিয়েছিলেন, যাদের ভাইয়ের রক্ত দিয়ে ৫ আগস্ট নতুন করে বাংলাদেশকে আবার স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছেন, সেই সহস্রাধিক রক্তদাতা শহীদ শাহাদাত বরণকারী বীর শহীদদের আত্মত্যাগ, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, জুলাই বিপ্লবের অংশীজনরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বিভক্তি ও বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশের মানুষ এই বিরোধ দেখতে চায় না। আমরা চাই, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। ২০২৪ সাল হবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রধান মাইলফলক।’
মামুনুল হক আরো বলেন, ‘এখনো বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। আমরা প্রশাসনকে গোটা বাংলাদেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক একটি দেশ গড়তে চাই।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম