
কৃষি-প্রযুক্তিতে নতুন এক অধ্যায় রচনা করছে উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং। সেখানকার হোথান শহরের সুবিশাল স্মার্ট এগ্রিকালচারাল পার্কে হাজারো গ্রিননহাউস প্রতিদিন গমগম করছে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে।। বৈদ্যুতিক ভাল্ভ, বুদ্ধিমান সেচ ব্যবস্থা আর স্বয়ংক্রিয় দরজায় একজন কর্মীই সামলাচ্ছেন ৩০টিরও বেশি গ্রিনহাউস।
প্রতিদিন সকালে কৃষকরা ইলেকট্রিক বাইক চালিয়ে চলে যান যার যার গ্রিনহাউসে। ৬৬৭ হেক্টরের সুবিশাল স্মার্ট কৃষিজমি এখানকার পুরনো কৃষির ধ্যানধারণায় এনেছে আমূল পরিবর্তন।
গ্রিনহাউসগুলোয় রয়েছে বিদ্যুৎচালিত নানা ভালভ, বুদ্ধিমান সেচ ব্যবস্থা, স্বয়ংক্রিয় রোলার শাটার দরজা। বেশিরভাগ কাজ স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় এখানকার ৩০টি গ্রিনহাউস সামলাতে পারেন একজন মাত্র কর্মী।
সিনচিয়াং শেংশি হুয়াছিয়াং অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি কোম্পানির প্রডাকশন সুপারভাইজর আব্দুর রহমান তুরসুনতোহতি জানালেন, আগে আমাদের গিয়ে গিয়ে একটি করে বাটন চাপতে হতো। এতে অনেক সময় নষ্ট হতো। এখন একজন লোকই ৩০টি বা ক্ষেত্রবিশেষে ১০০টি গ্রিনহাউস সামলাতে পারেন। বেশিরভাগ কাজ মোবাইল ফোনেই করা যায়।
এসব সম্ভব হয়েছে দ্রুত সংকেত প্রক্রিয়াকরণ ও ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তির কারণে। যার কারণে এখন মরিচ, শসা ও বেগুনের মতো সবজির ফলনও বেড়েছে।
ধাপে ধাপে এসব গ্রিনহাউসে এখন স্মার্ট প্রযুক্তির তৃতীয় পর্যায় চলছে। তবে প্রযুক্তির জটিলতা বাড়েনি এতে, বলা যায় আরও কমেছে।
সবজি চাষের পাশাপাশি প্রযুক্তি এখানে শস্যদানার প্রজননেও ভূমিকা রাখছে। দুই হাজার দুইশ বর্গমিটার জায়গায় বিশেষ আলোর ব্যবস্থা করার মাধ্যমে এখানে তৈরি হচ্ছে প্রায় ৪০০ জাতের ধানের চারা।
রাতে গ্রিনহাউসকে গরম রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে বাইরে থাকা সোলার ট্র্যাকিং হিট কালেক্টরে জমানো তাপ।
সিনচিয়াংয়ে এমনিতেই দিনের আলোর পরিমাণ বেশি। আর এর সঙ্গে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা বছরে পাঁচবার ধানের ফলন পাচ্ছেন। সেইসঙ্গে নতুন চারা জন্মানোর গতিও বেড়েছে চারগুণ।
চীনা কৃষি বিজ্ঞান একাডেমির আওতাধীন ইনস্টিটিউট অব আরবান এগ্রিকালচারের গবেষক ওয়াং সেন জানালেন, উত্তর-পূর্ব চীনের সয়াবিন, সিছুয়ানের রেপসিড ও হাইনানের ধান—সবকিছুই বিস্তৃতভাবে পরীক্ষিত। পরীক্ষা শেষে বীজগুলো চীনের প্রধান উৎপাদন এলাকায় বপন করা হবে। ইতোমধ্যেই এগুলো কার্যকর ফলনের প্রমাণ দিয়েছে।
ড্রোনের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে তরমুজ। শুষ্ক গোবি মরুভূমিতে চাষ হচ্ছে স্যামন। সিনচিয়াংয়ের কৃষিকে দিনকে দিন সমৃদ্ধ করে চলেছে প্রযুক্তি। আর তাই এ অঞ্চল এখন জুজুবে, কাঠবাদাম, আঙ্গুর ও নাশপাতির উৎপাদনে চীনের শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া গত দশকে সবজির উৎপাদনও বেড়েছে দ্বিগুণ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম