আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চট্টগ্রামের পটিয়া আসনে মোহাম্মদ এনামুল হক এনামকে মনোনয়ন দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার পাশাপাশি স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে বিতর্কিত ও অতীতে দল থেকে বহিষ্কৃত একজন নেতাকে প্রার্থী করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ওই প্রার্থী তালিকায় চট্টগ্রাম–১২ আসনে মোহাম্মদ এনামুল হকের নাম রয়েছে।
ঘোষণার পরপরই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই মনোনয়ন নিয়ে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানায়। ফেসবুকে মীর জাহান নামের এক বিএনপি একটিভিস্ট লিখেছেন, ‘এস আলমের গাড়ি কাণ্ডে বহিষ্কৃত নেতা এনামকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এমন সিদ্ধান্তে হাসছে মানুষ, কাঁদছে তৃণমূল।’
জানা গেছে, দেশের বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে পরিচিত এনামুল হক এনামের বিরুদ্ধে অতীতে দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের মালিকানাধীন একটি গুদাম থেকে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তিনি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির দুই নেতা দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে দুই মাস পর সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
স্থানীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা আন্দোলনের সময় ঘরে ছিলেন, তারা আজ প্রার্থী। যারা মামলা খেয়ে রাস্তায় ছিলেন, তাদের কেউ পাত্তা পেল না। এতে দলের শীর্ষ নেতা ও তৃণমুল কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে।
বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিতর্কিতদের মনোনয়ন দিলে নির্বাচনের মাঠে কর্মীরা নিরুৎসাহিত হবে, এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, এনামুল হকের ঘনিষ্ঠজন ও উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়েও পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ চৌধুরী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, এস আলম পরিবারের তদবিরেই এনামুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও তা আমলে নেননি দলের শীর্ষ নেতারা। ফলে মাঠে জনপ্রিয় সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল, আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু, গুমের শিকার সৈয়দ সাদাত আহমেদের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও তারা মনোনয়ন পাননি।
তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, এমন সিদ্ধান্ত দলের মধ্যে বিভাজন বাড়াবে এবং নির্বাচনে দলের ক্ষতি ডেকে আনবে।
চট্টগ্রামের এক সিনিয়র বিএনপি নেতা বলেন, কেন্দ্র বলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে, কিন্তু মাঠের বাস্তবতা উল্টো। এমন সিদ্ধান্তে দলের আগামী নির্বাচনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এস আলম ঘনিষ্ঠদের মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির মিত্র দলও সমালোচনা করছে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ গত বুধবার বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও হাসিনার লোকজন সক্রিয়। কেউ এস আলমের মাধ্যমে, কেউ অন্যভাবে। চট্টগ্রামের পটিয়ার এনামুলের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এখনও এস আলমের লোকজন নিয়ে চলছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

