
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে আসন্ন অর্থবছরে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং এর ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা। প্রস্তাবে সিগারেটের ৪টি মূল্য স্তরকে ৩টিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার (০৮ মে ২০২৫) সকাল ১১টায় অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। তামাক কর বিষয়ক নলেজ হাব ‘বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি’ (বিএনটিটিপি) তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্ট কর আরোপের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির প্রকল্প কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিল। তিনি তার বক্তব্যে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য তামাক কর প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে ১ম স্তরে (বর্তমান প্রিমিয়াম স্তর) প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বৃদ্ধি করে ১৯০ টাকা নির্ধারণ ও ২য় স্তরে (বর্তমান উচ্চ স্তর) প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বক্তব্যে নিম্ন ও মধ্যম স্তর একীভূত করে ৩য় স্তর নির্ধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই স্তরে প্রতি ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩টি স্তরেই ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, বহাল রেখে এনবিআর কর্তৃক যৌক্তিক পরিমাণ “সুনির্দিষ্ট সম্পুরক শুল্ক” আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে ‘মূল্য বৃদ্ধির কারনে তামাক কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি’ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
প্রস্তাবে বিড়িতে বিদ্যমান ফিল্টার ও নন-ফিল্টার বিভাজন তুলে দিয়ে ২০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫%সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং এনবিআর কর্তৃক নির্ধারিত যৌক্তিক পরিমাণ “সুনির্দিষ্ট সম্পুরক শুল্ক” আরোপের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা ও গুলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০% সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং উভয়ক্ষেত্রে এনবিআর কর্তৃক নির্ধারিত যৌক্তিক পরিমাণ “সুনির্দিষ্ট সম্পুরক শুল্ক” আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৫% ভ্যাট, ১% হেলথ ডেভলপমেন্ট সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি ও বিএনটিটিপি-এর টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য, বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপি-এর টেকনিক্যাল কমিটির কনভেনর ড. রুমানা হক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক, বিএনটিটিপি-এর টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ইকবাল মাসুদ এবং একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও বিএনটিটিপি-এর টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা। আর সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন বিএনটিটিপি-এর গবেষণা সহযোগী ইশরাত জাহান ঐশী।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, তামাকজাত মদ্যের ওপর করারোপের এই প্রস্তাব বাস্তবায়তি হলে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ত্যাগ করবে এবং ১৭ লাখের বেশি তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। ১৭ লাখের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ হবে। এতে ৬৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
তারা আরও বলেন, আসন্ন বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে তামাকপাতা রপ্তানিতেও ২৫% শুল্ক পূণঃবহাল করা জরুরি। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করতে এনবিআরকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। সাংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী ও তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।