বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪,

১১ বৈশাখ ১৪৩১

বুধবার,

২৪ এপ্রিল ২০২৪,

১১ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

ঢাকার বিখ্যাত রুপলাল হাউজ এখন মসলার আড়ৎ

রেডিও টুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৪ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ০৬:১৯, ১৪ আগস্ট ২০২২

Google News
ঢাকার বিখ্যাত রুপলাল হাউজ এখন মসলার আড়ৎ

বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা পুরান ঢাকার রূপলাল হাউজ ক্রমেই জৌলুস হারাচ্ছে। ১৮শ শতকের আর্মেনীয়দের তৈরী করা ঢাকা শহরের বিখ্যাত বাড়ি রুপলাল হাউজের সেই রুপ এখন আর নেই। ফরাশগঞ্জের বিশাল এই দ্বিতল ভবনের সিংহভাগই এখন অবৈধদের দখলে চলে গেছে। ভবনের নিচতলার পুরোটাই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন আড়ত্দার। ভবন দখল করে তারা গড়ে তুলেছে একাধিক হলুদ, মরিচ, আলু, পিঁয়াজের আড়ৎ। বর্তমানে জীর্ণশীর্ণ এই রুপলাল হাউজ জামাল হাউজ নামে পরিচিত। তবে বেশ কিছুদিন আগে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। স্থাপত্য নকশায় বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ ভবনটিতে যথেষ্ট বৈচিত্র্য এবং কারুকাজ বিদ্যমান দেখা গেলেও ইতিহাসের সাথে বর্তমান রূপলাল হাউজের আকাশ পাতাল ব্যবধান।

চারদিকে ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক শ্রমিকদের কোলাহলে চাপা পড়ে গেছে রুপলাল হাউজ। হাউজের সামনে ছোট্ট করে বিলবোর্ডে লেখা জামাল হাউজ। হাউজের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে পড়েছে। ভবনের সামনে ছাদেকার্নিশে এবং অন্যান্য স্থানে বটগাছ গজিয়েছে। এমন জরাজীর্ণ অবস্থায় ও জামাল হাউজের বিভিন্ন কোঠায় মানুষ জন বসবাসকরছে। নিচের কোঠা গুলোতে মসলার আড়ৎ। ভবনটির চারদিকে পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নানারকম মসলার বস্তা। 

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের পদভারে মুখরিত এই দৃষ্টি নন্দন বাড়ি। ইতিহাসের অনেক সাক্ষী তারা সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরানো ঢাকার বড়কাটরা, ছোটকাটরা এখন ভগ্নপ্রায় অনেক প্রাচীন স্থাপনা আজ নিশ্চিহ্ন। এই ধারায় ঢাকার ফরাশগঞ্জে বুড়িগঙ্গার কোলে কালের সাক্ষী রূপলাল হাউসও ক্ষয়িষ্ণু প্রায়। এখানে বাংলাদেশ শাসনের অনেক শলাপরামর্শ হয়েছে। ইংরেজ শাসকরা সেখানে শরাব গিলেছে, বল ডান্সও হয়েছে। সে সময় এক ভিন্ন রকম দাপট ছিল। কিন্তু তা স্থায়ী থাকেনি। ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখন সেটি মসলা ব্যবসায়ীদের আড়ত।

মূলত, অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ভবনটি নির্মাণ করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। শ্রীরুপলাল দাস তার পরিবার সহ বসবাসের জন্য ইমারতের নকশা তৈরী করেন। গ্রীক স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত এর বিশালডরিক কলাম, যা ঢাকা শহরের আর কোথাও দেখা যায়না। অতঃপর তার উত্তরাধিকারীদের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে এ ইমারতধীরে ধীরে রুপলাল হাউজের সম্প্রসারণের কাজ করতে থাকে। 

এছাড়াও এই বাড়িতে ১৮৮৮ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের ঢাকা সফরকালে রূপলাল হাউজে অবস্থান নেন। এইবাড়িতেই বসতো নিয়মিত গানের আসর। সেই আসর মাতিয়ে দিতেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ ওয়ালীউল্লাহ খাঁ কিংবালক্ষ্মী দেবীরা। এই বাড়ি কবি কাজী নজরুল ইসলামেরও স্মৃতিধন্য। কবি এখানে পা রেখেছেন বেশ কয়েকবার। 

জানা যায়, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগকালে রূপলালের উত্তরাধিকাররা বাড়িটি বিক্রি করে ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান।এরপর বাড়ির মালিকানা নিয়ে শুরু হয় দলাদলি। তবে ১৯৫৮ সালে মোহাম্মদ সিদ্দিক জামাল রূপলাল হাউজকিনে নেন। নাম দেন ‘জামাল হাউজ’।

ঢাকা ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী ইতিহাসবিদ হাশেম সূফী বলেন, 'আর্মেনীয়রা তৈরী করে গেছেন এই নান্দনিকবাড়িটি। তৎকালীন ঢাকার বড় বড় বাড়ি গুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম ছিল। এই বাড়িতে পা দিয়েছেন তৎকালীন ব্রিটিশ লর্ড।পা দিয়েছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল। কিন্ত কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এই বাড়ির সৌন্দর্য। স্থানীয় দখলদারথেকে এটি পুনরুদ্ধার করে এটিকে পর্যটন উপযোগী করা দরকার।

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের