
পর্যাপ্ত রাতের ঘুম সবার জন্যই অত্যন্ত জরুরি। যদিও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের সময় কিছুটা কমে যায়, তবুও তা ন্যূনতম সীমার নিচে নামলে শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। সদ্যোজাত শিশু যেখানে দিনে ১২–১৫ ঘণ্টা ঘুমায়, সেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রয়োজন হয় গড়ে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম।
তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক এখন দিনে মাত্র ৩–৪ ঘণ্টা ঘুমাচ্ছেন—তা-ও আবার একদিন নয়, দিনের পর দিন। কেউ কেউ ৫–৬ ঘণ্টা ঘুমালেও, তা সুস্থ জীবনের জন্য যথেষ্ট নয়।
অপ্রতুল ঘুমের কারণে শরীরে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দীর্ঘদিন কম ঘুমানোর ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মনোযোগের অভাব, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মানসিক অবসাদ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কেউ যদি টানা তিন দিন চার ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান, তবে তার রক্তে এমন কিছু পরিবর্তন হয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি ডেকে আনে। এমনটা শুধু বয়স্কদের হয়, তা নয়। কমবয়সিদের মধ্যেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই গবেষণাটি করা হয় সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেখানকার গবেষকদের মতে, টানা তিন দিন চার ঘণ্টা বা তার কম ঘুমালে শরীরে এমন এক ধরনের মলিকিউল বা প্রোটিন তৈরি হয়, যা রক্তে প্রদাহ ঘটায়। অত্যধিক মানসিক চাপে থাকলে বা শরীর গুরুতর অসুস্থ হলেও ওই প্রোটিন তৈরি হয়।
কিন্তু সমস্যা হলো, যদি ওই প্রোটিন দীর্ঘদিন ধরে রক্তে থাকে, তখন সেটি ধমনীর ক্ষতি করে। পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, হার্ট ফেলিয়রের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়।
উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১৬ জন সুস্থ কমবয়সি পুরুষের ওপর এই গবেষণা করেন। খাওয়া-দাওয়া, শরীরচর্চা, এমনকি গায়ে রোদ লাগানো ইত্যাদি কাজ সময় মেনে করা হলেও অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের সময় পাল্টে দেওয়া হয়।
তিন দিন তাদের সাড়ে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে দেওয়া হয় এবং তিন দিন ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ঘুমাতে দেওয়া হয়। এর পরে তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হয় এবং সেখানেই তাদের রক্তে ধরা পড়ে ওই প্রোটিনের উপস্থিতি।
সাধারণত শরীরচর্চা করলে ওই প্রোটিনের মাত্রা কমে যায় বা ভালো প্রোটিনের মাত্রা ঘটে। কিন্তু দিনের পর দিন কম ঘুমানোর পরে শরীরচর্চা করলেও ওই প্রোটিনের মাত্রা কমে না। অর্থাৎ, কম ঘুমিয়ে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চলেও উপকার মেলে না।
তাই রোগের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের অংশ করে তুলুন ঘুমকেও। দিনে ৭-৮ ঘণ্টার ঘুম সবার জন্যই জরুরি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম