
ভরা শরতেও বৃষ্টি কমছে না। আর এই কারণেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি, তার সঙ্গে পেট খারাপ। আবার রোদ যখন উঠছে তাও বেশ চড়া। পেট খারাপ হোক বা রোদে বেশি ঘোরাঘুরি—পানিশূন্যতা হতে পারে যখন তখন।
কখনো অতিরিক্ত শ্রম, শরীরচর্চা করে পানি ঠিকমতো না খেলে শরীরের পানির অভাব ঘটতে পারে। শরীরে পানির মাত্রা কম গেলে ব্যক্তি শুধু নেতিয়ে পড়েন না, ক্ষেত্রবিশেষে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ইলক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়। শুধু পানি নয়, শরীর থেকে বের হয়ে যায় জরুরি কিছু খনিজও।
সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি খনিজ পদার্থগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখা সুস্থ থাকার পক্ষে খুবই জরুরি। তার ফলেই মাথা ধরা, ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা যায়। শারীরবৃত্তীয় নানা কার্যকলাপও থমকে যেতে পারে শরীরে এই খনিজগুলোর অভাব হলে।
পুষ্টিবিদদের মতে, ডাবের পানি হলো প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়।
এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে। ডাবের পানি শরীরের জন্য অবশ্যই উপকারী। অল্প একটু পানির অভাব হলে ডাবের পানি ভালো।
যেমন রোদে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চায় প্রচুর ঘাম হলে বা টানা উপবাসের ফলে শরীরে পানি ও খনিজের অভাব হলে ডাবের পানি অত্যন্ত উপযোগী। এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শরীরে শক্তির জোগান দেয়।
ডাবের পানিতে মেলে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
তবে পানিশূন্যতার আরো কারণ থাকতে পারে। ক্রমাগত বমি, আন্ত্রিকের ফলে শরীরে থেকে দ্রুত প্রবল পরিমাণে পানি ও খনিজ বের হয়ে যেতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দরকার হয় স্যালাইন।
আন্ত্রিক বা বমি হলে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ, পানি বের হয়ে যেতে থাকে। তখন শরীরে প্রয়োজনীয় পানি ও খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে রোগীকে স্যালাইন খাওয়ানো হয়। এটি বিশেষভাবে তৈরি। যাতে দ্রুত শরীরে শর্করা, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম নির্দিষ্ট মাত্রায় মেশানো থাকে। প্রচণ্ড গরমে রোদে দীর্ঘক্ষণ ঘোরাঘুরি বা শরীরচর্চার পরেও এটি খাওয়া যায়। তবে মাপ জানা জরুরি।
কতটা খাওয়া দরকার
শরীরে যাতে পানির ঘাটতি না হয়, সেজন্য দিনে এক গ্লাস ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে বা বাইরে ঘোরাঘুরি হলে দুই গ্লাস খাওয়া যায়। তবে এক সঙ্গে দুই গ্লাস না খাওয়াই উচিত।
আন্ত্রিক, বমি হলে দিনে প্রয়োজন মতো ২০০-৪০০ মিলিলিটার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। তবে তা একবারে নয়। বমি বা মলত্যাগের পর শরীর ঝিমিয়ে যেতে শুরু করলে অল্প অল্প করে স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে চামচে করে তা খাওয়ানো যেতে পারে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, ডাবের পানি শরীর ভালো রাখতে এমনিও খাওয়া যায়। পানিশূন্যতা অল্প হলে ডাবের পানিতেই সমাধান হতে পারে। বিশেষত, দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার পর ডাবের পানি খাওয়া ভালো। তবে সমস্যা গুরুতর হলে, পানি বেশি মাত্রায় বের হয়ে যেতে শুরু করলে স্যালাইন-ই ভরসা।
তবে এ ছাড়া লবণ, চিনি দিয়ে দইয়ের পাতলা ঘোল, পাতিলেবুর শরবতও শরীরে পানির ঘাটতি দূর করে। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বেছে নিতে হবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম