
প্রার্থনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গত বুধবার সকালে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় শুরু হয়েছে রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মগুরু পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা। এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করছেন ৯১ বছর বয়সি কার্ডিনাল ডিন জিওভান্নি বাতিস্তা রে। নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য এর আগেই ভ্যাটিকানে জড়ো হন বিশ্বের ১৩০ জনের বেশি কার্ডিনাল। ভ্যাটিকান সময় গতকাল বিকালে তারা বিখ্যাত রেনেসাঁ ফ্রেস্কোর নিচে ভোট দেওয়ার জন্য সিস্টিন চ্যাপেলে যান।
রোমান ক্যাথলিকদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচিত নতুন পোপই বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় বিলিয়ন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের পরবর্তী নেতৃত্ব দেবেন। গত ২১ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পোপ বেছে নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।
২৬৭তম পোপ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবেন কার্ডিনালরা, যাকে কনক্লেভ বলা হয়। বর্তমানে ২৫২ জন ক্যাথলিক কার্ডিনাল আছেন, কিন্তু মাত্র ১৩৩ জন নতুন পোপ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। কারণ এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে তাদেরকে ৮০ বছরের কম বয়সি হতে হবে।
নতুন পোপ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াটি কতক্ষণ স্থায়ী হবে, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। সাম্প্রতিক কনক্লেভগুলো মাত্র কয়েক দিন স্থায়ী হয়েছিল, যদিও আগের শতাব্দীগুলিতে মতবিরোধের কারণে মাঝেমধ্যে সভাগুলো মাসের পর মাস ধরেও চলতে থাকে।
পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ধাপগুলো
ভ্যাটিকানের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সানক্টা মার্থাই অতিথিশালার কক্ষে স্থানান্তরিত হয়ে সকাল ১০টায় সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় একটি প্রার্থনার জন্য জড়ো হবেন। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে কার্ডিনালরা পলিন চ্যাপেল থেকে সিস্টিন চ্যাপেলের দিকে একটি মিছিল শুরু করবেন। এরপর নির্বাচক কার্ডিনালরা ছাড়া বাকিরা সিস্টিন চ্যাপেল ত্যাগ করবেন। সন্ধ্যা ৭টার কাছাকাছি সময়ে প্রথম ভোটের পর ধোঁয়ার প্রথম অংশ বের হবে।
কার্ডিনালরা চ্যাপেলে প্রবেশ করার পর, নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকবে না। এটি কনক্লেভের শুরু, যা ল্যাটিন থেকে এসেছে ‘কাম ক্লেভ বা চাবি দিয়ে তালাবদ্ধ’। প্রথম ভোটেই পোপ নির্বাচিত হবেন না, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এমনটা ঘটেনি। কিন্তু প্রথম ভোটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ একজন নতুন পোপ নির্বাচন করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, তাই কার্ডিনালদের একটি নির্দিষ্ট স্তরের সমর্থনপ্রাপ্ত প্রার্থীদের ওপর মনোনিবেশ করতে হবে। আর প্রথম অথবা প্রথম কয়েকটি ভোটই নির্দেশ করবে কে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন, যা নির্বাচিত কার্ডিনালদের মধ্যে যথেষ্ট ঐকমত্য তৈরি করতে সক্ষম।
যদি প্রথম দিনের ভোটে নতুন পোপ না আসে, তাহলে কার্ডিনালরা রাতের খাবারের জন্য গেস্ট হাউজ কাসা সান্তা মার্টায় ফিরে যাবেন। ভোটদান প্রক্রিয়ার পাশে, কাকে সমর্থন করবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। পরদিন আবারও এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
নতুন পোপ নির্বাচন কতটুকু এগোলো, সেটি বোঝার একমাত্র উপায় হলো ধোঁয়া। নির্বাচন চলাকালে প্রতিবার ভোট শেষে নির্দিষ্ট চুল্লিতে ব্যালট পেপার পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর ফলে দিনে দুই বার যে ধোঁয়া বের হয়, সেটিই নতুন পোপের বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়। কালো ধোঁয়ার অর্থ হলো পোপ নির্বাচিত হননি। আর সাদা ধোঁয়া দেখার মানে হলো নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
সাদা ধোঁয়া দেখা যাওয়ার পর সাধারণত ঘণ্টা খানেকের মধ্যে নতুন পোপ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের বারান্দায় এসে দাঁড়ান। এরপর কনক্লেভে অংশগ্রহণকারী একজন জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান। তিনি ল্যাটিন ভাষায় চিত্কার করে বলেন, হ্যাবেমাস পাপাম, বাংলায় যার অর্থ আমাদের একজন পোপ আছেন। কার্ডিনাল এরপর নতুন পোপের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় নতুন পোপকে যে নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, সেটি তার আসল নাম হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে।
পোপ হওয়ার যোগ্যতা কী?
তাত্ত্বিকভাবে বললে বলা যায়, ব্যাপ্টাইজ বা খ্রিষ্টধর্মের দীক্ষাগুরু এমন যে কোনো রোমান ক্যাথলিক পুরুষই পোপ হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভ্যাটিকানের কার্ডিনালরা তাদের নিজেদের মধ্য থেকেই একজনকে পোপ হিসেবে বেছে নিতে পছন্দ করেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণকারী জর্জ মারিও বার্গোগলিও, যিনি পোপ ফ্রান্সিস নামে পরিচিত, তিনি পোপ নির্বাচিত হন। দক্ষিণ আমেরিকা, যেখানে বিশ্বের প্রায় ২৮ শতাংশ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বসবাস করে, সেখান থেকে প্রথম বারের মতো পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নতুন পোপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার্ডিনালরা সাধারণত একজন ইউরোপীয়, বিশেষ করে একজন ইতালীয়কেই বেছে নেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচিত ২৬৬ জন পোপের মধ্যে ২১৭ জনই এসেছেন ইতালি থেকে। সূত্র :বিবিসি
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম