
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ধেয়ে আসতে পারে ভয়াবহ এক ‘মেগা সুনামি’, যা দেশটির একাধিক রাজ্যে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, কানাডার নর্থ ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কেপ মেনডোসিনো পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যাসকাডিয়া সাবডাকশন জোনে যদি শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটে, তবে তা প্রশান্ত মহাসাগরের পানিতে বিশাল ঢেউ তৈরি করে আনতে পারে ‘মেগা সুনামি’।
এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া, উত্তর ওরেগন ও দক্ষিণ ওয়াশিংটন। সম্ভাব্য ক্ষতির আওতায় রয়েছে আলাস্কা ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জও।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে ৮ বা তার চেয়েও বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এতে উপকূলীয় অঞ্চল প্রায় সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত ধসে যেতে পারে, যা বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমি ব্যবহারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক টিনা দুরা বলেন, “ক্যাসকাডিয়া একটি অনন্য ভূতাত্ত্বিক অঞ্চল। যদিও এখানে জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবে মোহনা ও উপকূলীয় এলাকায় বহু বসতি রয়েছে। এসব অঞ্চল ভূমিধস ও সুনামির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পড়ে।”
তিনি আরও জানান, ১৭০০ সালের ২৬ জানুয়ারি ওই এলাকায় সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল। এর পর এতদিন বড় কোনো কম্পন না হলেও অঞ্চলটি ‘রিং অব ফায়ার’-এর অংশ হওয়ায় যে কোনো সময় বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
আলাস্কা, হাওয়াই ও পশ্চিম উপকূল: তিনটি হুমকির কেন্দ্রবিন্দু
আলাস্কা: দুর্গম ও উঁচুনিচু ভূপ্রকৃতির কারণে এখানে ভূমিধসের ঝুঁকি বেশি।
হাওয়াই: আগ্নেয়গিরিসমৃদ্ধ দ্বীপগুলিতে অতীতে একাধিকবার বিশাল সুনামি ঘটেছে। ১০৫,০০০ বছর আগে লানাই দ্বীপে আছড়ে পড়েছিল প্রায় ১,০০০ ফুট উঁচু ঢেউ।
পশ্চিম উপকূল: যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভূকম্পনপ্রবণ এই এলাকা রিং অব ফায়ারের অংশ। এখানেই সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে জরুরি পরিকল্পনা, আবাসন নীতিমালা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম