বুধবার,

২৭ আগস্ট ২০২৫,

১২ ভাদ্র ১৪৩২

বুধবার,

২৭ আগস্ট ২০২৫,

১২ ভাদ্র ১৪৩২

Radio Today News

পাকিস্তান কেন নতুন রকেট কমান্ড চালু করছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ২৭ আগস্ট ২০২৫

Google News
পাকিস্তান কেন নতুন রকেট কমান্ড চালু করছে

ঘোষণাটি আসে পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের আগ মুহুর্তে। ১৩ আগস্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানান, নতুন আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠন করা হয়েছে। এই কমান্ড আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবদিক থেকে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।  

ইসলামাবাদে হওয়া অনুষ্ঠানে শাহবাজ শরিফ আরও জানান, যুদ্ধের সময় শত্রুকে মোকাবিলায় এটি পাকিস্তানকে আরও শক্তিশালী করবে।

পাকিস্তানে শত্রু বলতে সাধারণত ভারতকে বোঝানো হয়। প্রতিবেশী হলেও পারমাণবিক সক্ষমতায় দুই দেশই একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। আগামী সপ্তাহে ভারত মধ্যবর্তী পরিসরের আগ্নি-ভি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে। এমন সময় পাকিস্তান রকেট ফোর্স গঠনের কথা জানাল। যদিও বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করছেন, ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে পাকিস্তানের এআরএফসি গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

মে মাসের সংঘাতের সময় উভয়পক্ষ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন হামলা চালায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সংঘাত পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার কৌশলগত দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। দেশটি প্রায় তিন দশক ধরে শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। পারমাণবিক অস্ত্রের কখন ব্যবহার হতে পারে সে বিষয়েও এতদিন তাদের অবস্থান অস্পষ্ট ছিল।

একটি ডেডিকেটেড রকেট ফোর্স গঠন করা সারা বিশ্বেই প্রচলিত। রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতেও নিখুঁত লক্ষ্যের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে।

আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড কী

শাহবাজ শরিফ এআরএফসির কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি নতুন শাখা। দেশটির সামরিক কমান্ডের কাঠামো অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্র স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশনের (এসপিডি) অধীনে থাকে। আর কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির (এনসিএ) মাধ্যমে। এনসিএ হলো দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। 

এক সময় এসপিডিতে কর্মরত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাঈম সালিক। তিনি বলেন, এআরএফসি পারমাণবিক সক্ষমতার অস্ত্রের পরিবর্তে রকেট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেবে। 

আরেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা তুঘরাল ইয়ামিন বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের দক্ষতা বৃদ্ধি ও অভিযানের প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য এআরএফসি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমান্ড হামলা প্রতিরোধ কিংবা সীমিত পরিসরের সংঘাত; উভয়ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। 

ইয়ামিন আরও বলেন, আঞ্চলিক হুমকির প্রেক্ষাপট বদলে যাচ্ছে। সেদিক বিবেচনায় এই কামান্ড গঠন করা হয়েছে। কোনো সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় এটি গঠন করা হয়নি। 

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নয়টি কোর পরিচালনা করে। পাশাপাশি তাদের তিনটি বিশেষায়িত কমান্ড আছে। এগুলো হলো- এয়ার ডিফেন্স, সাইবার ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড। এআরএফসির নেতৃত্ব দেবেন তিন তারকা জেনারেল। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর জেনারেলদের মধ্যে তিন তরকা জেনারেলরা উচ্চপদস্থ। 

এআরএফসি কেন প্রয়োজন

পাকিস্তানের কাছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে। যেমন, সারফেস-টু-সারফেস, এয়ার-টু-সারফেস এবং সারফেস-টু-এয়ার সিস্টেম। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এআরএফসি মূলত স্বল্প থেকে মধ্যম পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে।

তুঘরাল ইয়ামিন বলছেন, ‘পাকিস্তান তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে পরিবর্তন আনছে। এই কমান্ড গঠন সেটিরই অংশ।’ একই সুরে কথা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ক্লারি। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, পাকিস্তান তাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। ভারতের সঙ্গে সংঘাতে ব্যবহারের জন্য তারা ইতোমধ্যে স্বল্প পরিসরের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করছে।  

ক্রিস্টোফার ক্লারি বলেন, সচরাচর যেসব হামলা হয় সেগুলো মোকাবিলায় গুরুত্ব দেবে এআরএফসি। এটি গঠনের ফলে পারমাণবিক মিশনের দায়িত্বশীল স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড পৃথকভাবে কাজ করতে পারবে।

মে মাসের সংঘাত থেকে শিক্ষা

মে মাসের সংঘাতের সময় পাকিস্তান দাবি করেছিল, যুদ্ধের প্রথম দিনেই তারা বেশ কয়েকটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করেছে। এ নিয়ে শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে ভারতের সামরিক কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, তারা কিছু জেট হারিয়েছেন। তবে এ সংখ্যা কত তা উল্লেখ করেননি।  

সংঘাতের সময় ভারত পাকিস্তানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করেছিল। এর মধ্যে ছিল সিন্ধ প্রদেশের ভোলারি বিমানঘাঁটি। যেখানে ভারত ব্রাহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে। এই মিসাইল ভারত-রাশিয়া যৌথভাবে তৈরি করা।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক বিশ্লেষক আল জাজিরাকে বলেন, ভারতের ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের বিপরীতে পাকিস্তান বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারেনি। কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্র শুধু এসপিডি ও স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড দ্বারা পারমাণবিক মিশনের জন্য পরিচালিত হয়। 

বাবর ক্ষেপণাস্ত্র হাফত-৭ নামেও পরিচিত। একটি ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। কিন্তু এটি পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতির সঙ্গে যুক্ত। নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া ওই বিশ্লেষক বলছেন, নতুন রকেট ফোর্স গঠন করা দেখিয়ে দিল যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতির ঘাটতি আছে। ভারতকে মোকাবিলায় এতদিন তারা শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সবশেষ সংঘাত পাকিস্তানকে বুঝিয়েছে, ভারতকে মোকাবিলায় প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার জরুরি।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের