
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কর্তৃক ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে একটি মাইলফলক এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তামাক সেবন অসংক্রামক রোগের অন্যতম বড় কারণ, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপযোগী অভিহিত করে অনতিবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা।
আজ রোববার ২৪ আগস্ট ২০২৫ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, ১৫ লক্ষাধিক মানুষ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ১৫ বছরের কমবয়সী শিশুর মধ্যে ৪ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত। ২০১৮ সালে তামাক থেকে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা ব্যয় হয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। দেশে অসংক্রামক রোগের (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ফুসফুসের জটিল রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) প্রকোপ বাড়াচ্ছে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। প্রাণঘাতী এ সকল রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ফলে, প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ প্রতিবছর শুধুমাত্র চিকিৎসা খরচ যোগাতেই দরিদ্র হয়ে পড়ছে। তামাকের কারণে পরিবেশ, প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে এবং খাদ্য উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন! তামাক কোম্পানিগুলো শিশু-কিশোরদেরকে ভয়াবহ মাদকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এমতাবস্থায়, তামাকজনিত অকালমৃত্যু রোধ, ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের গতিরোধ এবং সার্বিক ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বিগত দিনের মতো বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই শুভ উদ্যোগের ঘোরতর বিরোধীতা করছে তামাক কোম্পানিগুলো। কারণ স্পষ্ট, তামাক কোম্পানিগুলো চায় শিশু, কিশোর-তরুণদেরকে তাদের মৃত্যুপণ্যের ভোক্তা বানিয়ে ব্যবসা উর্ধ্বমূখী করতে। পক্ষান্তরে, সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বদ্ধপরিকর। অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি তেমনই একটি উদ্যোগ।
যৌথ ঘোষণায় নীতি প্রণয়নে অগ্রাধিকার অর্থাৎ ‘সব নীতিতে স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য’ দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কর্মকৌশল ও নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে বিদ্যমান নীতিসমূহ সংশোধনে সমন্বয় ও সহযোগিতার প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। তামাক অসংক্রামক রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ। সেহেতু যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষরকারী অর্থ মন্ত্রণালয়, বানিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য দপ্তর/বিভাগসমূহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগে আন্তরিকভাবেই সহযোগিতা করবে। কারণ কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ অসংক্রামক রোগের লাগাম টানতে পারে। এ জন্যই মুনাফালোভী তামাক কোম্পানির অপতৎপরতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে এখন থেকে সকল মন্ত্রণালয় জনস্বার্থে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তামাক বিরোধী কর্মীরা। প্রকৃতপক্ষে সর্বস্তরের মানুষও সেটা প্রত্যাশা করে।
অর্থ মন্ত্রণালয়কে তামাক খাতের রাজস্বের চাইতে জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে সবকিছুর উপরে। যেমনটি প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- “তামাকের বিরুদ্ধে তরুণদের সচেতন না করা গেলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।” তরুণদের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের স্বার্থেই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তামাক কোম্পানি স্বাস্থ্য খাতের অংশীজন নয়, কোনভাবেই তামাক কোম্পানিকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। উপরন্তু তামাকের কারণে অকালমৃত্যু, দারিদ্রতা, পরিবেশ-প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতির দায়ে তামাক কোম্পানিগুলোকে জবাদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এতে আগামী প্রজন্ম এবং রাষ্ট্র উপকৃত হবে।