
জুলাইয়ে দেশে ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি ছিল, আগস্টে তা আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া প্রতিদিনের ডেঙ্গু বিষয়ক বুলেটিন।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন
চলতি মাসের ৯ দিনের চিত্রে দেখা গেছে প্রতিদিন মশাবাহিত এ রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চারশোর মতো রোগী, প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ৫ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা ছিল ৩১৯ জন, প্রাণ হারিয়েছিল ৩ জন। পরদিন ৬ আগস্টে রোগী ছিল ৪২৮ জন, মৃত্যু হয় ৩ জনের, ৭ আগস্টে ৪০৮ জন আর মৃত্যু হয় ৩ জনের, ৮ আগস্ট হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয় এ রোগে আক্রান্ত আরও ১৯০ জন, সেদিন কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি, এরপর ৯ আগস্ট রোগী ছিল ৩২৫ জন, মৃত্যু হয় ৩ জনের।
রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪৪৮ জন নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
তাতে অগাস্টের প্রথম ১০ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এ তথ্য কেবল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হাসপাতালের তথ্য, এর বাইরেও দেশে থাকা অসংখ্য হাসপাতাল-ক্লিনিকের তথ্য অধিদপ্তরের তালিকাতে আসে না।
নতুন করে তিনজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০১ জনে।
অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এর আগে গত জুলাইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের, যা কিনা চলতি বছরে এক মাসে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা ছিল গত জুনে; ১৯ জনের।
এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন জন, এপ্রিলে সাত জন, মে মাসে তিন জন মারা যান। মার্চ মাসে কোনও ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৪৮ জনকে নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২৪ হাজার ছাড়াল; মোট রোগী ২৪ হাজার ১৮৩ জন। এর আগে গত ৭ আগস্ট মোট রোগী সংখ্যা ২৩ হাজার ছাড়ায়; অর্থাৎ ৩ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজারের বেশি রোগী।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা তিন হাজার ২০৩ জন।
চলতি বছরে গত জুলাই মাসে সরকারি হিসাবে রোগী সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬৮৪ জন, যা কিনা বছরের সবচেয়ে বেশি রোগী। জুনে ছিল ৫ হাজার ৯৫১ জন। চলতি বছর জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন এবং মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৪৮ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী বরিশাল বিভাগে; ৯৫ জন। বাকিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৮১ জন, ঢাকা বিভাগে ৮৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৬ জন, খুলনা বিভাগে ৫৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৪ জন, রংপুর বিভাগে ৭ জন আর সিলেট বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ জন।
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে প্রাণ হারানো ৩ জনের দুই জন ঢাকার একজন চট্টগ্রাম বিভাগের। তাদের মধ্যে ৯ বছরের এক ছেলে শিশু ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে, ৪০ বছরের এক পুরুষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর ২৩ বছরের এক তরুণ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর তথ্য রাখতে শুরু করে সরকার। সে বছরে রোগী ছিল ৫ হাজার ৫৫১ জন। এই রোগে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ রোগীর সঙ্গে সর্বোচ্চ মৃত্যুও দেখে বাংলাদেশ।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন; তার মধ্যে মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম