
চলতি মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, ভারতীয় রফতানিতে (Indian Exports) ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। দু'দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, 'রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্যই খেসারত দিতে হবে ভারতকে (India)। আজ, বুধবার (২৭ অগস্ট) থেকেই শুল্কচাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই বৈঠকে বসতে চলেছে দিল্লি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ২৭ অগস্ট, ২০২৫, মার্কিন সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে (EDT) অর্থাৎ ভারতীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে (IST)। এই সিদ্ধান্তে নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে আমেরিকা-ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে। ট্রাম্প (US President Donald Trump) প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, এই বাড়তি শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত আর পিছানো হবে না।
হোয়াইট হাউসের খসড়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বর্তমান ২৫ শতাংশ শুল্কের উপরে আরও ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক যোগ হবে। ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, এই বাড়তি শুল্ক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করবে। অন্যদিকে ভারত, যে চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাশিয়ান তেল ক্রেতা, জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেই এই তেল কিনছে তারা।
একনজরে ভারত-আমেরিকার শুল্ক-নীতি নিয়ে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১. মার্চ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত পাঁচ দফা আলোচনার পরও ভারত-মার্কিন আলোচনায় কোনও সমাধান হয়নি। এর পরই ৩০ জুলাই ট্রাম্প ভারতীয় আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন। কার্যকর হয় ৭ অগস্ট থেকে। সেই সময় তিনি ভারতের অর্থনীতিকে 'মৃত' বলে কটাক্ষ করেন।
২. এরপর ৬ অগস্ট ট্রাম্প সই করেন এক্সিকিউটিভ অর্ডারে, যাতে আরও ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, ২১ দিন পর অর্থাৎ ২৭ অগস্ট থেকে তা কার্যকর হয়।
৩. মঙ্গলবার মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট US Customs and Border Protection (CBP)-এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত Executive Order 14329 কার্যকর হয় এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।
৪. ভারতের বিদেশমন্ত্রক ইতিমধ্যেই এই শুল্ককে 'অন্যায়', 'অযৌক্তিক' এবং 'অগ্রহণযোগ্য" বলে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৫. মঙ্গলবার আমদাবাদে একাধিক প্রকল্প উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, 'কৃষক, ছোট শিল্প এবং দেশীয় উৎপাদকদের স্বার্থে আমরা কোনও আপোস করব না। চাপ যতই বাড়ুক, আমরা তা সামলাব।' তিনি দেশবাসীকে স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানান।
৬. একই দিনে ভারত ও মার্কিন বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই দেশই সম্পর্ক আরও মজবুত করতে আগ্রহী। আলোচনা হয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি নিরাপত্তা, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, মাদকবিরোধী অভিযান এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা নিয়ে।
৭. তবে ভারত এখনও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ বা কমানোর কোনও নির্দেশ দেয়নি। মস্কোয় ভারতের রাষ্ট্রদূত স্পষ্ট জানিয়েছেন, 'ভারত সেরা দামে যেখানে পাবে সেখান থেকেই তেল কিনবে।' তাঁর মতে, ভারতের সহযোগিতা বৈশ্বিক তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করেছে।
৮. এই শুল্কবৃদ্ধি দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কে টান ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে 'Quad' (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া) জোটকে চীনবিরোধী কৌশলে ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্তু নতুন অর্থনৈতিক টানাপোড়েন সেই প্রচেষ্টায় প্রভাব ফেলতে পারে।
৯. মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, 'এটি আগ্রাসী অর্থনৈতিক কৌশল। আমরা রাশিয়ার উপর চাপ দিতে চাই। প্রগতির হার অনুযায়ী হয়তো আরও শুল্ক আরোপ করব, না হয় কমিয়ে আনব। আমাদের হাতে অনেক অস্ত্র রয়েছে।'
১০. এক মার্কিন সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় রফতানিকারক সংগঠনগুলির হিসাব অনুযায়ী এই শুল্কবৃদ্ধির ফলে ভারতের মোট মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশ প্রভাবিত হতে পারে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার। ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলির মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইলস, মূল্যবান ধাতু, অলংকার, চিংড়ি (shrimp exports) এবং চামড়াজাত পণ্য (leather products)।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম