
ভারত বুধবার কাশ্মীরে তিনটি নদীর বাঁধের সব গেট খুলে দিয়েছে। এ কারণে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত এলাকা থেকে মানুষজনকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স ও জিও টিভি।
নয়া দিল্লী বলেছে, বাঁধগুলোর গেট খুলে দেওয়ার আগে তারা ইসলামাবাদকে সতর্ক করেছে। পাকিস্তান বলেছে, সতর্কতা পেয়ে তিনটি নদীর ওপর বন্যার জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাভি, শতদ্রু ও চেনাব নদী ভারত থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়েছে।
পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের মতে, ভারী বৃষ্টি এবং ভারত বাঁধ দিয়ে অতিরিক্ত পানি ছাড়ায় পাঞ্জাব প্রদেশে বন্যার ‘অতি উচ্চ ঝুঁকি’ রয়েছে। পাঞ্জাব শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। দেশটির ২৪ কোটি মানুষের অর্ধেক এই প্রদেশে বসবাস করে।
ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ২ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হতে পারে। এক কিউসেক হল এক ঘনফুট বা প্রতি সেকেন্ডে ২৮ ঘন লিটারের সমান আয়তন। ভারতের এই পানি ছাড়া এককালীন নাকি বিভিন্ন ধাপে, তা স্পষ্ট নয়।
একজন পাকিস্তানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ভারত আগামী দিনগুলোতে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে পানি ছাড়বে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে হামলা হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি। গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই। তখন নদীর পানি ছাড়া না-ছাড়া নিয়ে উভয় দেশের নেতারা বাকযুদ্ধ চালিয়েছেন। এ কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের কারণে পাকিস্তানে বন্যা হলে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে।
ভারত সাধারণত বাঁধ অতিরিক্ত পূর্ণ হয়ে গেলে পানি ছেড়ে দেয়। সেই অতিরিক্ত পানি ভাটিতে পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়।
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। গত ১৪ আগস্ট থেকে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়। এরপর স্বেচ্ছায় বন্যাকবলিত এলাকা ছাড়েন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে বন্যায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বুধবার জরুরি বৈঠক ডাকেন। সেখানে চেনাব, শতদ্রু এবং রাভি নদীতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীকে সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পাঞ্জাবের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৫ হাজার তাঁবু সরবরাহ করেছে। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ যেন কোনো বিলম্ব ছাড়াই চলতে থাকে। গুজরাট, শিয়ালকোট এবং লাহোরে সম্ভাব্য শহুরে বন্যা মোকাবেলায় অবিলম্বে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম