
ইসরায়েলি হামলায় শনিবার গাজা সিটির একটি উঁচু ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ নিয়ে দুই দিনে দ্বিতীয়বার এমন হামলা হলো। এর আগে পরিকল্পিত অভিযানে শহরটি দখলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেনারা জনগণকে দক্ষিণে ‘মানবিক অঞ্চলে’ পালিয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে।
ইসরায়েল কয়েক সপ্তাহ ধরে এ ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্রে নতুন আক্রমণের সতর্কতা দিয়ে আসছে।
তবে এখনো সময়সূচি জানায়নি। তারা এরই মধ্যে শহরের উপকণ্ঠে অভিযান ও বিমান হামলা জোরদার করেছে। অন্যদিকে এই পরিকল্পনা বাতিলের আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি মানবিক পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে।
সেনাবাহিনী শনিবার জানায়, তারা গাজা সিটির একটি উঁচু ভবনে হামলা চালিয়েছে।
দাবি করা হয়, ‘হামাস সন্ত্রাসীরা সেখানে গোয়েন্দা সরঞ্জাম বসিয়েছিল এবং ইসরায়েলি সেনাদের পর্যবেক্ষণের জন্য নজরদারি পোস্ট স্থাপন করেছিল। নাগরিকদের ক্ষতি কমানোর জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা ভবনটিকে সুশি আবাসিক টাওয়ার হিসেবে চিহ্নিত করে জানিয়েছে, এটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিও শেয়ার করেছেন, তাতে প্রায় ১৫ তলা ভবনটি ধসে পড়তে এবং প্রচণ্ড ধুলা ও ধোঁয়া তৈরি হতে দেখা যায়।
কাটজ তার পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ এর আগের দিনও তিনি গাজা সিটির আরেকটি উঁচু ভবন ধ্বংসের ভিডিও শেয়ার করেছিলেন।
সেনারা জানিয়েছে, আসন্ন দিনগুলোতে তারা হামাসের ব্যবহৃত বলে মনে হওয়া স্থাপনাগুলো, বিশেষ করে উঁচু ভবনগুলোকে লক্ষ্য করবে। আরেকটি উঁচু ভবনকে শনিবার খালি করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। আসন্ন হামলার সতর্কতা জানিয়েছে এবং মানুষকে দক্ষিণে চলে যেতে বলেছে।
এর আগে এক সামরিক মুখপাত্র শহরের বাসিন্দাদের দক্ষিণ উপকূলের আল-মাওয়াসিতে যেতে আহ্বান জানান, যেখানে মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে বলে সেনারা জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখপাত্র আভিচায় আদরাই বলেন, ‘এই সুযোগে দ্রুত মানবিক অঞ্চলে (আল-মাওয়াসি) চলে যান এবং হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে যোগ দিন, যারা ইতিমধ্যে সেখানে গেছেন।’
ইসরায়েল যুদ্ধের শুরুতেই আল-মাওয়াসিকে নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা করেছিল। তবে তার পর থেকে হামাস যোদ্ধারা সাধারণ মানুষের মধ্যে লুকিয়ে ছিল দাবি করে বারবার সেখানে হামলা চালিয়েছে। গাজা সিটির বাসিন্দারা জানিয়েছে, তারা মনে করে, থেকে যাওয়া আর পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
এদিকে গাজায় প্রায় দুই বছরের এই যুদ্ধে ইসরায়েলকে ঘরে ও বাইরে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়তে হয়েছে সংঘাত শেষ করতে। গত মাসে হামাস একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়, যেখানে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ধাপে ধাপে জিম্মিদের মুক্তির কথা ছিল। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটিকে সব জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হবে, অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে, অন্যান্য শর্তের পাশাপাশি।
হোয়াইট হাউসে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় থাকা জিম্মিদের বিষয়ে হামাসের সঙ্গে আলোচনা করছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা হামাসের সঙ্গে খুব গভীর আলোচনায় আছি। আমি শুনছি কিছু (জিম্মি) সম্প্রতি মারা গেছেন। আশা করি তা ভুল, তবে এই আলোচনায় ৩০টিরও বেশি মৃতদেহের প্রসঙ্গ রয়েছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়, যার মধ্যে ৪৭ জন এখনো গাজায় আছে বলে ইসরায়েলি সেনারা বলছে। আবার এদের মধ্যে ২৫ জনকে মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প আরো বলেছেন, ‘আমরা বলেছি, তাদের সবাইকে এখনই ছেড়ে দাও, সবাইকে ছেড়ে দাও, তাহলে তাদের জন্য অনেক ভালো কিছু ঘটবে। কিন্তু যদি সবাইকে না ছাড়ো, তবে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠবে, ভয়ানক হবে।’
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা সিটি ও আশপাশে এখনো প্রায় ১০ লাখ মানুষ আছে, যেখানে গত মাসে তারা দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। তারা সতর্ক করেছে, এ অভিযান চালানো হলে আসন্ন এক ‘বিপর্যয়’ ঘটবে। গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষের বিশাল অংশ অন্তত একবার করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
হামাসের ২০২৩ সালের হামলায় এক হাজার ২১৯ জন নিহত হয়েছিল বলে সরকারি হিসাবের ভিত্তিতে এএফপির সংকলনে জানা যায়। এর প্রতিশোধে ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৩৬৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এ তথ্যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে। গাজায় গণমাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ এবং বহু এলাকায় প্রবেশে বাধার কারণে এএফপি স্বাধীনভাবে হতাহতের সংখ্যা ও অন্যান্য বিবরণ যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম