
ভারতে বসবাসকারী বাঙালিদের উপর সহিংসতা এবং বৈষম্যের অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ চালিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজ্যের বিধানসভায় এক বিশেষ অধিবেশনে মমতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপিকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে সরাসরি স্লোগান দেন। বলেন, ‘মোদি চোর, অমিত শাহ চোর, বিজেপি চোর’।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড জানিয়েছে, অধিবেশন চলাকালে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। বক্তব্যের সময় বিজেপি বিধায়করা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে মমতা আরও কড়া ভাষায় জবাব দেন।
তিনি বলেন, ‘তারা চায় না জনগণ আমার কথা শুনুক, কারণ শুনলেই তাদের মুখোশ খুলে যাবে। তিনি বলেন, ভোট চোর, গদ্দি ছোড় (ক্ষমতা ছেড়ে দাও)।
বিজেপিকে ‘অসাংবিধানিক ও অবৈধ’ দল বলেও দাবি করেন তিনি।
মমতা আরও বলেন, ‘(বিজেপি) অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, অবৈধ... এক, দুই, তিন, চার, বিজেপি হল সবচেয়ে বড় চোর। নির্যাতনকারীদের দল, লুটেরাদের দল।’
তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ‘ঔপনিবেশিক ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা’র প্রতিফলন বলেও অভিহিত করেন। তার অভিযোগ, গেরুয়া শাসনব্যবস্থা বাংলা ও বাঙালিদের উপনিবেশ বানাতে চায়।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘যারা বাংলাকে ঘৃণা করে, তারাও দেশবিরোধী। বিজেপি সক্রিয়ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। গণতন্ত্রকে সম্মান করে না। এত নির্লজ্জ ও মূল্যহীন দল আমি কখনো দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আর মাত্র কয়েকদিন বাকি... বিজেপির কেন্দ্রে থাকার কোনো অধিকার নেই। বাংলার মানুষ এমন একটা দিন আনবে, যেদিন বিধানসভায় একজন বিজেপি বিধায়কও থাকবে না।’
মমতা বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের (সংঘ পরিবারের) কোনো অবদান ছিল না। সবাই জানে, দেশভাগের পেছনে কারা ছিল, কারা সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়েছে, দিল্লিকে রাজধানী করার ষড়যন্ত্র করেছে।’
বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাসের উদ্যোগ নেয়, যেখানে বিজেপি সদস্যরা বাধা সৃষ্টি করে।
তবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন— বাংলার মানুষ এসব হামলা সহ্য করবে না, এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।
মোদির অধীনে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে উপহাস করেন মমতা। বলেন, 'মাঝে মাঝে তিনি আমেরিকার পায়ে পড়ছেন, কখনো রাশিয়া, চীন এবং ইসরায়েলের পায়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশ এবং তার মর্যাদা বিক্রি করে দিয়েছেন.... তারা কীভাবে দেশ চালাবে? তারা মানুষকে ঘৃণা করে এবং ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি করে...।
আমরা (সাধারণত) মোদিজিকে আক্রমণ করি না, কিন্তু আপনারা সকলেই জানেন না কীভাবে সৌজন্যের প্রতিদান দিতে হয়। তারা (মহাত্মা) গান্ধীজিকে ভুলে গেছে। তারা সবকিছু ভুলে গেছে... কারণ তারা আমাদের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভয় পায় "তারা মনে করে যদি মানুষ তাদের সঠিকভাবে মনে রাখে তবে তারা তাদের পদ হারাবে। তাদের আর কোন পরিচয় নেই, কেবল এই সত্য যে তারা নাথুরাম গডসের দল। জাতি তোমাদের কখনো ক্ষমা করবে না। গান্ধীজির হত্যাকারীদের কেউ ক্ষমা করবে না।'
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম