বৃহস্পতিবার,

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

২৬ ভাদ্র ১৪৩২

বৃহস্পতিবার,

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

২৬ ভাদ্র ১৪৩২

Radio Today News

পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রুশ ড্রোন, বেশ কয়েকটি ভূপাতিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Google News
পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রুশ ড্রোন, বেশ কয়েকটি ভূপাতিত

রাশিয়ার একাধিক ড্রোন তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করার পর ভূপাতিত করা হয়েছে বলে পোল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবার পোল্যান্ড সরাসরি রুশ সামরিক সম্পদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিল। পোল্যান্ড ও ন্যাটোর যুদ্ধবিমান এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানায়, তখন থেকেই তারা পোলিশ আকাশসীমায় অভিযান শুরু করে।

আজ বুধবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে রাশিয়ার ব্যাপক হামলার সময় পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করা ড্রোন ভূপাতিত করেছে পোল্যান্ড। ন্যাটো সদস্য এই দেশ ঘটনাটিকে ‘আগ্রাসনের ফল’ বলে উল্লেখ করেছে। এটি চলমান যুদ্ধে প্রথমবারের মতো ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ রাশিয়ান ড্রোনে গুলি চালাল।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক জানান, বিপুল সংখ্যক রাশিয়ান ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং যেগুলো সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করেছে, সেগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে।

ন্যাটোর মুখপাত্র বলেছেন, ‘ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে পোলিশ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং জোটটি পোল্যান্ডের সঙ্গে পরামর্শ করছে।’
পোল্যান্ডের সামরিক কমান্ড জানিয়েছে, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী হামলার সময় বারবার তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে ড্রোন। তবে এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গৃহীত অভিযান এখন শেষ হয়েছে। রাডার ১০টিরও বেশি বস্তু শনাক্ত করেছে, যেগুলো হুমকি তৈরি করেছিল সেগুলো ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই বস্তুগুলো যেখানে ভূপাতিত হয়েছে সেই সম্ভাব্য স্থানগুলো চিহ্নিত করার জন্য অনুসন্ধান চলছে।’ এ ঘটনায় পোল্যান্ডের জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং পোডলাস্কি, মাজোভিয়েস্কি ও লুবলিন অঞ্চলের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এটি আগ্রাসনের একটি ঘটনা, যা আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার হুমকি তৈরি করেছে।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ বিষয়ে অবহিত হয়েছেন বলে সিএনএন প্রতিবেদক কাইটলান কলিন্স মঙ্গলবার জানিয়েছেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।


ন্যাটোও এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ান ড্রোন কয়েকবার ইউক্রেন সীমান্তবর্তী দেশগুলোর আকাশসীমায় ঢুকেছে, যার মধ্যে পোল্যান্ড ও রোমানিয়াও রয়েছে। তবে এতদিন সেগুলো ভূপাতিত করা থেকে বিরত থেকেছে এসব দেশ। কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, এ ধরনের পদক্ষেপে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এবং রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়াতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এক রাতেই রাশিয়া ৪১৫টি ড্রোন এবং ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে অন্তত ৮টি ড্রোন ছিল ‘পোল্যান্ডের দিকে লক্ষ্য করে।’ তিনি বলেন, ‘এটি ইউরোপের জন্য এক অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির। একটি শক্ত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন এবং তা হতে পারে কেবল ইউক্রেন, পোল্যান্ড, সমগ্র ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রতিক্রিয়া।’

পশ্চিম ইউরোপের এই দাবি, একদিন রাশিয়া ন্যাটো সদস্য দেশ আক্রমণ করতে পারে। এটা তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং এটি রাশিয়াকে শত্রু হিসেবে উপস্থাপনের কৌশল বলে তিনি বলেছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটকে যুদ্ধে উসকে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণ করে না।

পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর চোপিন এয়ারপোর্ট কয়েক ঘণ্টার জন্য আকাশসীমা বন্ধ রাখার পর পুনরায় চালু করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্লাইটে বিঘ্ন ও বিলম্ব ঘটতে পারে। তবে পূর্ব পোল্যান্ডের লুবলিন শহরের বিমানবন্দর এখনো বন্ধ রয়েছে।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় ভোলিন ও লভিভসহ প্রায় পুরো ইউক্রেনই রাতভর বিমান হামলার সতর্কতায় ছিল। এর আগে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী দাবি করেছিল, রাশিয়ার ড্রোন ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে, যা জামোসচ শহরের জন্য হুমকি তৈরি করেছিল। তবে পরে তারা টেলিগ্রাম বার্তা থেকে এই বিবৃতি সরিয়ে নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট সিনেটর ডিক ডারবিন বলেছেন, ‘রাশিয়ান ড্রোনের মাধ্যমে ন্যাটোর আকাশসীমা বারবার লঙ্ঘন করা প্রমাণ করে, পুতিন আমাদের পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর সুরক্ষার অঙ্গীকারকে পরীক্ষা করছেন।’

তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘ইউক্রেনে পুতিন যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন, তার পর এই অনুপ্রবেশগুলো উপেক্ষা করা যাবে না।’ রিপাবলিকান প্রতিনিধি জো উইলসন এক্স-এ লিখেছেন, ‘রাশিয়া ড্রোন দিয়ে ন্যাটো মিত্র পোল্যান্ডকে আক্রমণ করছে, এটি যুদ্ধের পদক্ষেপ।’

উইলসন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক যা, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে দেউলিয়া করে দেবে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে মায়েদের ও শিশুদের ওপর বোমা বর্ষণ করে পরাজয় বরণ করেই পুতিন এখন সন্তুষ্ট নন, তিনি সরাসরি ন্যাটোর ভূখণ্ডে আমাদের অঙ্গীকার পরীক্ষা করছেন।’

গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্প বলেন, তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় ধাপে যেতে প্রস্তুত। কারণ কয়েক মাসের শান্তিচুক্তি আলোচনায় কোনো ফল আসেনি। এটি তার সবচেয়ে শক্ত ইঙ্গিত যে, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় মস্কো বা তাদের তেল ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়াতে পারেন।

পোল্যান্ড ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার ইউক্রেন আক্রমণের কয়েক মাস পর থেকেই উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, কারণ এর আগে একটি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র পথ ভুলে  দক্ষিণ পোল্যান্ডের একটি গ্রামে আঘাত হানে এবং দুইজন নিহত হন।

এরই মধ্যে পোল্যান্ড ঘোষণা করেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টায় বেলারুশের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে। বেলারুশে রাশিয়া-নেতৃত্বাধীন সামরিক মহড়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাশিয়া ও বেলারুশের এই বৃহৎ মহড়া ‘জাপাদ’ ড্রিল নামে পরিচিত। প্রতিবেশি ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগও বেড়ে গেছে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের