
অশান্ত নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দেশটির সুপ্রিমকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে বেছে নিয়েছে জেন জি। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনকারী তরুণরা কাঠমান্ডুতে এক ভার্চুয়াল সভা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশটির বিভিন্ন জেলা থেকে আন্দোলনকারী নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এই আলোচনা সভায় যোগ দেন। সেখান থেকেই তারা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে বেছে নেন।
নেপালের জেন-জি’রের প্রবল বিক্ষোভের মাঝেই মঙ্গলবার ভেঙে পড়ে ওলি সরকার। একে একে মন্ত্রীদের পদত্যাগের পর, স্বয়ং ওলিও পদত্যাগ করেন। তারপর থেকে একেবারে বাংলাদেশের ছাঁচেই নেপালের দায়িত্ব তুলে নেয় সেনাবাহিনী। নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেলের একটি বক্তব্য সামনে আসার পর থেকে জোর চর্চা হয়েছে নেপালে রাজতন্ত্র ফিরে আসা নিয়েও।
তবে পরের দির বুধবার সব চিত্র উল্টে যায়। স্থানীয় এবং একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে যে, বুধবার বিকেলে কয়েক হাজার জেন-জি আন্দোলনকারী ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কার্কিরর নাম ঘোষণা করে। নেপালের বিভিন্ন জেলা থেকে পাঁচ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। কার্কি তরুণদের ডাকে সাড়াও দিয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, জেন জি আন্দোলনের নেতারা তাদের এজেন্ডা তৈরির জন্য একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে। তাদের আলোচনা কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে ঘিরেই ছিলো মূলত। জানা গেছে, বর্তমানে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকার কারণে, কার্কির নামেই সবুজসংকেত। অর্থাৎ, আন্দোলনের পরে, একই বিষয়ে বাংলাদেশের ছাঁচেই হিমালয়ের দেশটি।
প্রথমে কার্কির কাছে প্রস্তাব পাঠায় আন্দোলনকারীরা। তিনি প্রস্তাব বিবেচনার জন্য কমপক্ষে এক হাজার লিখিত সই দাবি করলে আড়াই হাজারেরও বেশি তরুণের লিখিত সমর্থন পেয়েছেন। তবে এখনও ক্ষমতার রাশ সেনার হাতে। তারা জেন জি’র প্রস্তাব মেনে নেবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এনিয়ে বৃহস্পতিবার সেনা প্রধানের সঙ্গে জেন জি প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হবার কথা জানা গেছে।
৭২ বছর বয়সী সুশীলা কার্কি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী যিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। শুরুতে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহকে অনেকেই পছন্দের প্রার্থী মনে করলেও, জেন জি’র প্রতিনিধিরা জানান, বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ওলির ইস্তফার পরে প্রাথমিকভাবে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পরবর্তী সরকার প্রধান হিসেবে কাঠমান্ডুর নির্দল মেয়র, তথা জনপ্রিয় র্যাপার বছর পঁয়ত্রিশের বলেন্দ্র শাহ ওরফে বলেনের নাম সামনে এনেছিল। নেপালের গণমাধ্যমকে এক জেন জি প্রতিনিধি বলেন, তিনি আমাদের ফোন না ধরায় আলোচনার মোড় ঘুরে যায় অন্য নামের দিকে। সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন সুশীলা কার্কি।
কার্কি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হলেও ভার্চুয়াল সভায় আরও বেশ কিছু নাম নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটির প্রধান কুলমান ঘিসিং, যুবনেতা সাগর ঢাকাল এবং ধরান মেয়র হরকা সম্পাং। ইউটিউবার নেপালিও বেশ সমর্থন পেয়েছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, অন্য কেউ পদটি গ্রহণ না করলে তবেই তিনি এগিয়ে আসবেন। তবে এখনও অনেক পথ বাকি।
নেপালের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুশীলা কার্কি প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে প্রথমে তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগডেলের সঙ্গে দেখা করবেন, এরপর প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেলের অনুমোদন চাইবেন। এরি মধ্যে, নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে সুশীলা কার্কিকে সমর্থন জানিয়েছেন কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ। বুধবার রাতে তিনি সামাজিক মাধ্যমে তার এই সমর্থনের কথা জানান।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হিসাবে খ্যাত সুশীলা কার্কি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। তাঁকে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক পরিষদের সুপারিশে এই পদে নিয়োগ দেন। বিচার বিভাগে যোগদানের আগে কার্কি একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
২০০৬ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি এবং ২০০৯ সালে সুপ্রিমকোর্টের অ্যাড-হক বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন, যা পরের বছর স্থায়ী হয়। ২০১৬ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেয়ার আগে স্বল্প সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান বিচারপতি থাকার সময় তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর কিছু রায় দিয়েছিলেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম