অসাধারণ নকশা ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর নকশা করা বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ফেন্ডশিপ হাসপাতাল ভবনটিকে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারী বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের তালিকায় সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকুলীয় এই হাসপাতালকে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে স্বকৃতি দেয়। বিশ্বের ১১টি দেশের ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনা থেকে বাছাই করে তিনটি স্থাপনার সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফেন্ডশিপ হাসপাতালের সঙ্গে ছিল জার্মানির বার্লিনের জেমস-সায়মন-গ্যালারি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতু।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামের দৃষ্টিনন্দন এই ভবন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের। সেবার মান ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে প্রশংসা কুড়িয়েছে বে-সরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ কর্তৃক পরিচালিত এই হাসপাতাল। সল্প মুল্যে আধুনিক মানের সেবা পেতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন এখানে।
ভাল সেবার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন নকশার কারণে হাসপাতালের সৌন্দর্য দৃষ্টি কেড়েছে বিদেশিদেরও। যুক্তরাজ্যের স্থাপত্য কলা বিষয়ক সর্বোচ্চ সংস্থা রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টসের (রিবা) ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য নির্বাচিতদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে হাসপাতালটি। সাধারণত প্রতি দুই বছর পর পর সেরা স্থাপনার পুরস্কার দিয়ে থাকে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস। যুক্তরাজ্যের বাইরের যেসব স্থাপনায় ‘নকশায় শ্রেষ্ঠত্ব এবং অর্থপূর্ণ সামাজিক প্রভাব’ রয়েছে, তাদেরই এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই খবরে আনন্দিত স্থানীয় বাসিন্দা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালে সাতক্ষীরা উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষদের আধুনিক স্বাস্থ্য সেবাদিতে ৮০ শয্যাবিশিষ্ট ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো হাসপাতাল ও ভবনের মূল নকশা করেছেন খ্যাতনামা স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী।
ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর সহায়তায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তোলা এই কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। উপকূলের এমন একটি এলাকায় এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে যা ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পুরস্কারের জুরি বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী জানাযায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ বাংলার জলো পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে সাতক্ষীরার ফেন্ডশিপ হাসপাতাল। তারা এই হাসপাতাল স্থাপনাটিকে একটি ‘মানবিক স্থাপত্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এ স্থাপনার বিশেষত্ব হচ্ছে, স্থানীয় প্রকৌশলীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি গড়েছেন। ভবনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার রাখা হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা, সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হয়েছে ফেন্ডশিপ হাসপাতাল। ২০১৩ সালে নকশা করার পর চার বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। বিজ্ঞপ্তিতে নল হয় কম বাজাটের মধ্যেও স্থাপত্য কীভাবে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাকে শক্তিশালী ও সক্ষম করে তুলতে পারে তার উৎসাহব্যাঞ্জক উদাহরণ হচ্ছে এই ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।
রেডিওটুডে নিউজ/ইকে
