অজ্ঞাতনামা লাশ, হেফাজতে মৃত্যু আর মব- এখন মানবাধিকারের তিন সংকট

বুধবার,

১০ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বুধবার,

১০ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

অজ্ঞাতনামা লাশ, হেফাজতে মৃত্যু আর মব- এখন মানবাধিকারের তিন সংকট

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০৯:৫৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
অজ্ঞাতনামা লাশ, হেফাজতে মৃত্যু আর মব- এখন মানবাধিকারের তিন সংকট

বাংলাদেশে গত দেড় বছরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম খুনের অভিযোগ খুব একটা শোনা না গেলেও মানবাধিকার সংগঠক ও সংস্থাগুলোর কাছে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, কারা ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু আর মব সন্ত্রাস।

তাদের অভিযোগ, এই সময়ে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশজুড়ে মাজার, দরগা ও বাউলদের ওপর অব্যাহত হামলা ও নিপীড়নের মতো ঘটনা ক্রমাগত বাড়লেও এর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ খুব একটা চোখে পড়েনি।

যদিও আগের সরকারের সময়ে ঘটা গুম খুনের বিষয়ে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার এবং র‍্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীতে থাকা সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদেও স্বাক্ষর করেছে সরকার।

এর আগে আওয়ামী লীগ আমলে এই মানবাধিকার ইস্যুতেই র‍্যাব ও এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়ে সরকারি বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে গুম ও খুনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সোচ্চার হয়ে উঠেছিলো।

মানবাধিকার সংগঠক ও অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলছেন, মানবাধিকারের কোনো কোনো ক্ষেত্রে গত দেড় বছরে উন্নতি হলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়, বরং প্রতিদিনই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বা এমএসএফ এর সম্পাদক সাইদুর রহমান বলছেন, "এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো 'অজ্ঞাতনামা লাশ'। পাশাপাশি মব সন্ত্রাস দেশজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে নাজুক করে তুলেছে"।

যদিও সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিবিসি বাংলাকে বলছেন, গুম খুনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থার পাশাপাশি সংস্কারের দিক থেকে মানবাধিকার বিষয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপ এ সরকার নিয়েছে। তার আশা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এসে এগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে মানবাধিকার সংস্কৃতির ক্রমাগত উন্নতি হবে।

অজ্ঞাত লাশ, কারা হেফাজতে মৃত্যু ও মব

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক এক বছরের মাথায় চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছিলো, অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার রক্ষার চ্যালেঞ্জিং কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে।

সংস্থাটি তখন তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলো, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে যে ভীতি, দমন-পীড়ন ও গুমের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটত, তার কিছুটা অবসান ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কথিত রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে নির্বিচার আটক করছে। মানবাধিকার সুরক্ষায় তারা এখনো কাঠামোগত সংস্কার আনতে পারেনি।

"উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা (মব ভায়োলেন্স), রাজনৈতিক সহিংসতা এবং রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠীর বিশেষ করে নারী অধিকার, সমকামী, উভকামী ও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিবিরোধী ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের হাতে সাংবাদিকদের হয়রানি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলছে," ওই বিজ্ঞপ্তিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছিলো।

সেই পরিস্থিতির এখনো কোনো উন্নতি হয়নি বলে বলছেন দেশের মানবাধিকার সংগঠক ও সংস্থাগুলো।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১০ মাস সময়ে মব সহিংসতা ও গণপিটুনির ২৫৬টি ঘটনায় কমপক্ষে ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

"সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীরা এই সহিংসতার শিকার হয়েছে," সংস্থাটি তাদের রিপোর্টে বলেছে।

অক্টোবরের শেষে মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার' তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলের অবসানের পর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ২৮১ জন নিহত হয়েছেন৷

এছাড়া তাদের হিসেবে, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২০২৪ সালের ৯ই অগাস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন বিচারবহির্ভূতভাবে এবং আরও ১৫৩ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে৷

এসব হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলোতে পুলিশ এবং সেনাসদস্যদের জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে অধিকারের প্রতিবেদনে৷

মানবাধিকার সংগঠক সাইদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, গত দেড় বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির জন্য অনেকাংশ দায়ী 'কথিত মব', বিশেষ করে তার মতে- রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং দরগা-মাজার-বাউলদের ওপর হামলা নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এই মব।

"সোমবার বাউল শিল্পী আবুল সরকারের জামিন হয়নি আদালতে এবং মানিকগঞ্জের আদালত পাড়ায় একদল আইনজীবী 'একটা একটা বাউল ধর- ধইরা ধইরা জবাই কর' শ্লোগান দিয়েছেন। মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন এ ঘটনাতেই সেটা অনেকটা পরিষ্কার," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

চলতি বছরের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিলো, ২০২৪ সালের ৪ঠা অগাস্টের পর থেকে পরবর্তী ৫ মাসেই সারাদেশের ৪০টি মাজারে (মাজার/সুফি কবরস্থান, দরগা) ৪৪ বার হামলা চালানোর অভিযোগ পেয়েছিলো পুলিশ। এসব হামলায় মাজার/দরগায় ভাঙচুর, মাজারের সম্পত্তি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলো, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর (মাজার ও দরগাহ) নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। সারাদেশে মাজারের (মাজার, দরগাহ) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠকরা। বরং কুমিল্লায় সেপ্টেম্বরে একটি গ্রামেই চার মাজারে হামলা হয়েছিলো।

ওই একই মাসে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে 'তৌহিদি জনতা' পরিচয়ে নুরুল হক ওরফে 'নুরাল পাগলা' এর কবর, বাড়ি ও দরবার শরিফে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মরদেহ কবর থেকে তুলে মহাসড়কের নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা, যা দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করে।

নূর খান লিটন বলছেন, গত দেড় বছরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম কিংবা ক্রসফায়ার না হলেও হেফাজতে মৃত্যু, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ দিয়ে মানুষকে হেনস্থা, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্যাতন ও মেরে ফেলার অভিযোগ নিয়মিতও পাওয়া যাচ্ছে।

"ঢাকার আশেপাশে এখন প্রতিনিয়ত লাশ পাওয়া যাচ্ছে। আগে এমন বুলেটবিদ্ধ লাশ পাওয়া যেতো। কিন্তু বুলেটবিদ্ধ না হলেও লাশ পাওয়া যাচ্ছে- যা নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

সাইদুর রহমানও বলছেন যে, এই অজ্ঞাতনামা লাশ এখন আগের যে কোনো সময়ের বেশি পাওয়া যাচ্ছে, যার অর্থ হলো কোনো না কোনো ভাবে হত্যাকাণ্ড কিংবা খুন- সেটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বা এমএসএফ এর হিসেবে, শুধু অক্টোবর মাসেই অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া গেছে ৬৬টি এবং এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫২।

সংস্থাটি বলছে, এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশিরভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়।

এর মধ্যে কিছু সংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দি ও রক্তাক্ত অবস্থা কিংবা শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

নৌ-পুলিশকে উদ্ধৃত করে দেশের সংবাদপত্রে আসা খবর অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত এক বছরে শুধু খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী থেকে মোট ৫০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০টির পরিচয় পরে প্রকাশ পেয়েছে।

চলতি বছরের অগাস্টেই ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর আলাদা আলাদা জায়গা থেকে থেকে নারী, শিশুসহ অজ্ঞাতনামা চারজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।এই চার জনের মধ্যে দুজনের হাত বাধা অবস্থায় ছিলো।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৮ই আগস্টের পর থেকে চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন অন্তত ১১২ জন। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে বগুড়া কারাগারে পরপর চারজন আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনা তখন আলোচনায় এসেছিলো।

অন্যদিকে এমএসএফ জানিয়েছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে তাদের কাছে কারা হেফাজতে ১১৯ জনের মৃত্যুর তথ্য আছে। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে পুলিশ হেফাজতে ২১ জন, রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০৬ জন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ২৬ জন।

মানবাধিকার সংগঠক সাইদুর রহমান বলছেন, ৫ই আগস্টের আগে উদ্বেগ ছিলো বিচার বিভাগীয় হত্যা, গুম, খুন, রিমান্ডে নির্যাতন, কারা হেফাজতে নিহত হওয়া, অজ্ঞাত লাশ পাওয়া, সভা সমাবেশে বাধা কিংবা ভোট না হওয়া নিয়ে।

"৫ই অগাস্টের পর সবার আশা ছিলো এগুলো কমবে। বাস্তবতা হলো গুম খুন কমলেও অজ্ঞাত মৃত্যু বেড়েই চলেছে। আর সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে মবের দ্বারা। অর্থাৎ মানবাধিকার নিয়ে মানসিকতা, আচরণ ও চর্চায় কোনো পরিবর্তন আসেনি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. রহমান।

নূর খান লিটনও বলছেন, পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে কিন্তু তা প্রতিরোধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ তারা দেখছেন না।

"সারা দেশে হাজার হাজার মামলা হচ্ছে যার সাথে অনেকের যুক্ত থাকার সম্ভাবনা নেই। মামলা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে। সরকার জেনেও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছ না। প্রতিনিয়ত লাশ পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নামে বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল হচ্ছে। মামলার খসড়া পাঠিয়ে টাকা দাবির মতো ঘটনা হচ্ছে। বাউল সংস্কৃতি কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সবমিলিয়ে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের কুফল ও ফ্যাসিবাদী মনন রয়েই গেছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা যা বলছেন
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সংস্কারের দিক থেকে মানবাধিকার বিষয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপ এ সরকার নিয়েছে, যা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এসে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে বলে তার বিশ্বাস।

আর সেটি হলে মানবাধিকার সংস্কৃতির ক্রমাগত উন্নতি নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি।

"গুম খুনের মতো মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছি। তবে মনে রাখতে হবে মানবাধিকার একটি সংস্কৃতির বিষয়। এটি ওভারনাইট কেউ ম্যাজিক দিয়ে ভালো করতে পারে না," বলছিলেন আইন উপদেষ্টা। বিবিসি বাংলা

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের