
আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থকে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভিটামিন এ। এই ভিটামিন আমাদের চোখ সুস্থ রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং কোষের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি উজ্জ্বল ত্বকের জন্যও প্রয়োজনীয়।
শরীরে ভিটামিন এ-এর অভাবে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে, তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—
রাতকানা
ভিটামিন এ রোডোপসিন নামক পদার্থ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পদার্থটি রেটিনার একটি রঞ্জক এবং চোখকে ম্লান আলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন এ ছাড়া চোখের আলো থেকে অন্ধকার পরিবেশে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়।
যেমন ম্লান আলোযুক্ত ঘরে হাঁটার সময়। এই কারণেই এই অভাবের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো কম আলো বা অন্ধকারে দেখতে অসুবিধা, যাকে রাতকানা বলা হয়। এই অবস্থা রাতে দেখতে অসুবিধা হিসেবে শুরু হতে পারে। কিন্তু যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি আরো খারাপ হতে পারে, যার ফলে সম্পূর্ণ অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত চুল ও নখ
সুস্থ চুল ও নখ কোষের বৃদ্ধি ও সিবাম উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে এবং উভয়ই ভিটামিন এ দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভিটামিন এ-এর অভাব মাথার ত্বকের তেল গ্রন্থি দ্বারা সিবাম উৎপাদন হ্রাসের কারণে শুষ্ক, ক্ষতিগ্রস্ত ও পাতলা চুলের কারণ হতে পারে। প্রাকৃতিক তেলের অভাবে চুল ভেঙে যেতে পারে এবং নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। একইভাবে, কেরাটিনাইজেশনের অভাবে নখ দুর্বল হয়ে যেতে পারে, সহজেই ভেঙে যেতে পারে বা ফাটল তৈরি করতে পারে।
শুষ্ক চোখ
ভিটামিন এ চোখের পানি উৎপাদনে সাহায্য করে, যা চোখকে তৈলাক্ত করে।
ভিটামিন এ-এর অভাবের কারণে শুষ্কতা, চুলকানি ও চোখে জ্বালাপোড়ার সম্মুখীন হতে হয়। যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থা সংশোধন না করা হয়, তাহলে এটি চোখের কর্নিয়ার ক্ষতি করতে শুরু করে, চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
ঘন ঘন সংক্রমণ
ভিটামিন এ শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন এবং কার্যকারিতায় সহায়তা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাব শরীরের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। যার ফলে আপনি সংক্রমণের ঝুঁকিতে বেশি পড়তে পারেন। ঘন ঘন সর্দি, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, অথবা অসুস্থতা থেকে ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ ভিটামিন এ-এর নিম্ন স্তরের লক্ষণ হতে পারে। এটি এড়াতে, লিভার, মাছের তেল ও সুরক্ষিত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করুন। এগুলো ভিটামিন এ-এর চমৎকার উৎস।
দুর্বল হাড়
ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের মতো অন্যান্য পুষ্টির সঙ্গে শক্তিশালী হাড় বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর অভাব হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করতে পারে, যা হাড়ের ভাঙন এবং হাড়-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন এ-এর নিম্ন স্তর হাড়ের পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, একটি প্রক্রিয়া যেখানে পুরনো হাড়ের টিস্যু নতুন টিস্যু দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এই ভারসাম্যহীনতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষতি করতে পারে। ভিটামিন এ-এর অভাবযুক্ত শিশুদের হাড়ের বিকাশ ব্যাহত হওয়ার কারণে বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
বন্ধ্যত্ব
ভিটামিন এ পুরুষ ও নারী উভয়ের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এর অভাব প্রজনন হরমোন উৎপাদন এবং শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি করতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে, এটি অনিয়মিত মাসিক চক্র বা গর্ভধারণে অসুবিধার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে, এটি শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গতিশীলতা হ্রাস করতে পারে। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বিকাশেও ভিটামিন এ ভূমিকা পালন করে। এই পর্যায়ে এর ঘাটতি জন্মগত ত্রুটি বা জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম