কম-বেশি আমাদের সবারই চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ থাকে। কিন্তু প্রতিদিন চিনি গ্রহণ ধীরে ধীরে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। তার মানে চিনি যে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বরং এটি নিয়মিত খেলে শরীরে কীভাবে তা প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। আপনি যদি মিষ্টির প্রতি আগ্রহী হন এবং কখনো ভেবে দেখে থাকেন যে এক মাস ধরে প্রতিদিন চিনি খেলে কী হয়, তাহলে আপনার সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এক মাস ধরে প্রতিদিন চিনি খেলে শরীরে কী ঘটে-
১. শক্তির স্তর ওঠানামা করতে শুরু করে
চিনি দ্রুত শক্তি দেয়, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। প্রতিদিন খাওয়ার হলে এটি হঠাৎ উচ্চ মাত্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং তারপর শক্তির ক্র্যাশ হতে পারে, যার ফলে আপনি ক্লান্ত বা খিটখিটে বোধ করতে পারেন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত মেজাজের ওপর চিনির প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ, বিশেষ করে চিনি, খাওয়ার ৬০ মিনিটের মধ্যে মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং গ্রহণের ৩০ মিনিটের মধ্যে ক্লান্তি বৃদ্ধি করে। এই উত্থান-পতন ঘটে, কারণ চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি এবং হ্রাস করে।
২. মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি
প্রতিদিন চিনি খাওয়ার ফলে আপনার শরীর আরও বেশি চিনি খেতে চাইতে পারে। ২০১৬ সালের একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, মিষ্টি স্বাদ মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণকে ট্রিগার করে যা আনন্দ এবং পুরষ্কারের সঙ্গেও সম্পর্কিত রাসায়নিক। এটি এমন একটি চক্র তৈরি করতে পারে যেখানে প্রতিবেলা খাবারের পরে বা চাপের সময় মিষ্টি কিছু খেতে তীব্র ইচ্ছা হতে পারে। এক মাস ধরে চিনি খাওয়ার অভ্যাস হলে আপনার জিহ্বা অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে।
৩. ত্বকের উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করতে পারে
প্রতিদিন চিনি খাওয়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে ত্বকের গঠন এবং উজ্জ্বলতাকে প্রভাবিত করে। ২০২২ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত চিনি ত্বকের প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে স্থিতিস্থাপকতা এবং হাইড্রেশন হ্রাস করে, যার ফলে অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড-প্রোডাক্টস (AGEs) গঠনের কারণে ত্বককে নিস্তেজ বা ক্লান্ত দেখায়। যদি আপনার চিনির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেশি থাকে তবে আপনি মাঝে মাঝে ব্রেকআউটও অনুভব করতে পারেন।
৪. পেট ফুলে যেতে পারে
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে অন্ত্রে গাঁজন হতে থাকে, যা ফোলাভাব বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারেও ফাইবারের অভাব থাকে, যা হজমকে ধীর করে দেয়। আপনি যদি এক মাস ধরে প্রতিদিন চিনিযুক্ত খাবার খান, তাহলে লক্ষ্য করবেন যে পেট ভারী হয়ে যাচ্ছে বা হজম অনিয়মিত হচ্ছে। হাইড্রেটেড থাকা এবং দই বা গাঁজানো শাক-সবজির মতো প্রোবায়োটিক খাবার খেলে এই প্রভাবগুলো মোকাবিলা করা এবং অন্ত্রে সুস্থ ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হতে পারে।
৫. ক্ষুধা এবং মেজাজে পরিবর্তন ঘটে
২০১৯ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন চিনি খেলে তা ক্ষুধা বা মেজাজকে সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করতে পারে। চিনি থেকে দ্রুত শক্তির উত্থানের পরে বেশিরভাগ সময়েই হঠাৎ করে হ্রাস পায়, যা আপনাকে খিটখিটে, অস্থির বা তাড়াতাড়ি ক্ষুধার্ত বোধ করাতে পারে। এক মাস ধরে চিনি খেলে তা আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং মেজাজের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

