
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নিম্নকক্ষের সিটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ হলে সেটার কোনো প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন থেকে আমরা প্রস্তাব করেছি, শুধু উচ্চকক্ষে পিআর হতে পারে। আমাদের যাত্রাটা এর মাধ্যমে শুরু হতে পারে। পরে আরও পরিবর্তন পরিবর্ধন করে উন্নত করা যাবে।
শনিবার দুপুরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘একটি গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতির সন্ধানে’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংলাপটি যৌথভাবে আয়োজন করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপট নিয়ে এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ-আল-মামুন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সভাপতি মামুনুল হক ও ব্যারিস্টার ফুয়াদসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস স্কুলের ডিন ড. একেএম ওয়াহিদুল করিম অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি একটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেন, যেখানে বিদ্যমান পদ্ধতির মতো ৩০০টি আসনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে, কিন্তু প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে অতিরিক্ত আসন নির্ধারণে ‘উইনার্স প্রিমিয়াম’ যুক্ত হবে। এই পদ্ধতি সরাসরি জবাবদিহিকে বজায় রেখে অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে বলে তিনি মত দেন।
অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিপর্যস্ত হয়েছে এবং ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন না করা হলে সবচেয়ে ভালো সংস্কারও ফলপ্রসূ হবে না।
ববি হাজ্জাজ অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধের একাডেমিক গুণাগুণের প্রশংসা করে বলেন, একাডেমিক তত্ত্ব ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মাঝে একটি বড় ব্যবধান রয়েছে। তিনি ‘আইভরি টাওয়ার সিনড্রোম’-এর বিষয়ে সতর্ক করেন এবং বলেন, বিদেশি মডেল অন্ধভাবে অনুসরণ না করে নিজস্ব বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি।
সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, নির্বাচন দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তিনি ২৬টি সংকটপীড়িত দেশের মধ্যে গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে ১৬টি দেশ গড়ে ১০ মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছিল।
ডা. তাসনিম জারা ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোট-আসন বৈষম্যের কথা উলেখ করেন এবং বলেন, যুব ও নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য সংস্কার জরুরি। তিনি মন্তব্য করেন, ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ এক ঐতিহাসিক সুযোগ, যা যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া অর্জন সম্ভব নয়।
মামুনুল হক বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থাকে একটি ‘দুই দলের খেলা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন, যেখানে ভোটাররা কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেন, কেবল প্রকৃত অর্থে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বই এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে পারে এবং বিপ্লোত্তর বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিপক্ষে মত পোষণ করেন। তিনি সতর্ক করেন যে, অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কদের অভাবে উচ্চকক্ষটি ‘রাজনৈতিক পার্কিং স্পট’-এ পরিণত হতে পারে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম