
কবি, চিন্তক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ছিল বিশ্ব ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা, যা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে দিয়েছে। অথচ এর পরের পদক্ষেপ হিসেবে তরুণদের পক্ষ থেকে কোনো গঠনমূলক সাংবিধানিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। ৮ আগস্ট আবারও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সংবিধানের অধীন রাষ্ট্র কায়েম হয়ে গেল। কিন্তু তরুণদের মধ্যে কোনো প্রতিরোধের চেতনা দেখা যায়নি।’
গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ‘শিক্ষা গবেষণা রাজনীতি: আসন্ন ডাকসু নির্বাচন’ শীর্ষক ভাববৈঠকীর আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে ঢুকিয়ে দিয়েছে, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে শিক্ষার কিছু নেই। তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেখেনি গণঅভ্যুত্থান কাকে বলে।’
শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘কেন আমরা দেখিনি রাজু ভাস্কর্যের সামনে বা শহীদ মিনারে তরুণরা দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন– আজ থেকে আমরা দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করলাম। কেন এই হিম্মত আসেনি? এত বড় ঘটনা ঘটার পরও তরুণদের মধ্যে আত্মসমালোচনা নেই। যদি শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান কায়েম থাকে এবং সেনাসমর্থিত অবৈধ উপদেষ্টা সরকার নির্বাচন করে, তবে প্রত্যেকেই রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে। কিন্তু ছাত্রনেতাদের মধ্যে এই সামান্য উপলব্ধিও নেই।’
তিনি বলেন, ‘ঊনসত্তরে আমরা দেখেছি, পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ এটি একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীন ছিল। তখন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাহিনী। বাইরের কোনো শক্তির হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না। অথচ এখন যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আজ বিলুপ্ত।’
তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে গণঅভ্যুত্থান করেছি। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হয়ে অংশগ্রহণ করিনি। তাই সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব মোকাবিলায় বাম, ডান, ইসলামপন্থি– সব মতের তরুণদের একত্র হতে হবে।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম