বুধবার,

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

১৯ ভাদ্র ১৪৩২

বুধবার,

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

১৯ ভাদ্র ১৪৩২

Radio Today News

নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি ঘিরে উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Google News
নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি ঘিরে উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস

ফেসবুকে এক নারী প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। হুমকিদাতাকে শিবির নেতা দাবি করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। বিচার চেয়েছে কয়েকটি বামপন্থী কয়েকটি সংগঠনও। যদিও শিবির মনে করে, হুমকিদাতা আলী হুসেনকে বাঁচাতে ট্যাগিং দেয়া হচ্ছে। 

এরই মধ্যে রিটকারী ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকির ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুটি তদন্তে কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় তিন সদস্যের এবং ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন দুই সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেছে। সোমবার রাতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাদেরকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা নিয়ে, বামজোট মনোনীত ‘অপরাজেয় ৭১’ ও ‘অদম্য ২৪’ প্যানেলের প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের করা রিটকে ঘিরে এখনও তুমুল চর্চা চলছে। রিটকারী ফাহমিদাকে লক্ষ্য করে ‘গণধর্ষণের পদযাত্রা’ করার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন ঢাবির শিক্ষার্থী আলী হুসেন। সেটি নিয়েই এখন মুখর ক্যাম্পাস। 

প্রচার-প্রচারণা ছাপিয়ে প্রার্থী ফাহমিদাকে গণধর্ষণের হুমকি দেয়া ছাত্রের বিচারের দাবিতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান তারা। এরপর সেখানেই অবস্থান নেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ‘এসো ভাই, এসো বোন, গড়ে তুলি অঙ্গীকার’, ‘আলী হুসেনের ছাত্রত্ব, বাতিল করো করতে হবে’, ‘নিপীড়কের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, পাঁচ আগস্টের পরে নারীদের পোশাকের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করেছে একটি গুপ্ত সংগঠন। যারা নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আলী হুসেন নামের একজন শিক্ষার্থী তার সহপাঠীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে বিন্দু পরিমাণ ব্যবস্থা নেয়নি। 

জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ইসলামের নাম ধরে একটি সংগঠন নারীদের নিরাপত্তার কথা বলে, অথচ তারাই নারীদেরকে হেনস্তা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনকে পেছাতে ফাঁকফোকর রেখেছে। আলী হুসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসন এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। যারা জাতীয় নির্বাচন ও ডাকসু পেছাতে ষড়যন্ত্র করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের লাল কার্ড দেখাবে।

ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, বিগত দেড় দশকের নিপীড়নমূলক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে বক্তব্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে সূচনা হয়েছিল, একটি চক্রান্তকারী দেশবিরোধী শক্তি সেই স্বাধীনতাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। এই শক্তি সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে।

রোকেয়া হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক শ্রাবণী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী অন্য আরেকজন শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকি দিতে পারে না। রাজনীতিতে নারীদের নিরাপদ করে তুলতে হবে। আর শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বিথি হাসান বলেন, রাজনীতিতে নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। একটা গোষ্ঠী আমাদের আটকে রাখতে চায়। ডাকসুতে নারী শিক্ষার্থীরা কম অংশগ্রহণ করেছেন। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে, মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শিক্ষকদের দাবি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে অভিযুক্তকে। শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে তাহমিনা খানম বলেন, হাইকোর্টে একজন প্রার্থীর রিটের বিষয়কে কেন্দ্র করে সেই নারী প্রার্থীকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হুমকিদাতা আলী হুসেনকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

ফাহমিদাকে নিপীড়নের অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন করে অপরাজেয় ৭১ ও অদম্য ২৪ প্যানেলও। নারী শিক্ষার্থীকে অশালীন পোষ্টের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে করেছ শিবির। এ সময় সংগঠনের নেতারা দাকি করেন, গণধর্ষণের হুমকিদাতা তাদের সংগঠনের কেউ নন। 

দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে প্রচার শেষে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন। বিচারের কথা বলায় অন্যরা তাদের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন। এ কারণে অন্যের ওপর দায় না দিয়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। শুরু থেকেই প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন যদি সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজকে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।

এদিকে, যে শিক্ষার্থী ওই হুমকি দিয়েছিল, সেই আলী হুসেনের ফেসবুক ঘেটে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচিতে তার যোগ দেয়ার ছবি আছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পোস্টে নিজেকে শিবির সমর্থকও দাবি করেছেন তিনি।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের