
চীনা প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের উচ্চ-স্তরের সভায় যোগদান করেন এবং বক্তৃতা দেন, যেখানে তিনি বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় চীনা প্রজ্ঞা ও সমাধান ব্যাখ্যা করেন। তাঁর বক্তৃতায় একটি দায়িত্বশীল প্রধান দেশ হিসেবে চীনের দায়িত্বশীলতা ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী লি বৈশ্বিক প্রশানশাসনসংশ্লিষ্ট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করেন। এগুলো হচ্ছে: একটি স্থিতিশীল ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরিবেশ গড়ে তোলা; একটি সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা; ভবিষ্যৎমুখী উদ্ভাবনী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় গতি সৃষ্টি করা; আরও টেকসই, সবুজ ও কম-কার্বন উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা; বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের সমস্যাগুলোর প্রতি সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখানো; এবং বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা উন্নত করতে চীনা সমাধান ব্যবহার করা।
চীন তার বৈশ্বিক প্রশাসন দর্শনকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে অনুশীলন করে আসছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি প্রধান দেশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। অবকাঠামো ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে চীনের উদ্যোগে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ হলো শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। দক্ষিণ এশিয়ায়, চীনা কোম্পানিগুলো, বাংলাদেশে ৭টি রেলপথ, ১২টি রাস্তা, ২১টি সেতু এবং ৩১টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যার ফলে ৫.৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থানীয় জনগণের জন্য সত্যিকার অর্থে সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। এটি চীনের সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-লাওস রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে, দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের আদান-প্রদানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আফ্রিকায় মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ নির্মাণের ফলে, কেনিয়ার পরিবহনব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রে চীন ইতিবাচকভাবে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্লাস’ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রস্তাব করেছে ও সে অনুসারে কাজ করছে। ব্রাজিলে চীনের স্টেট গ্রিড কুয়াংমিং ইলেকট্রিক পাওয়ার লার্জ মডেল স্থানীয় পাওয়ার গ্রিডকে বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে সাহায্য করেছে, জটিল পরিবেশে পরিদর্শন সমস্যা সমাধান করেছে, গ্রিডের অপারেটিং দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করেছে, এবং ব্রাজিলের শক্তি সরবরাহের জন্য শক্তিশালী নিশ্চয়তা দিয়েছে।
২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশে প্রথম চীনা সহায়তাপ্রাপ্ত রোবোটিক পুনর্বাসনকেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় উদ্বোধন করা হয়। চীন কর্তৃক প্রদত্ত সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় নির্মিত এই কেন্দ্রটির লক্ষ্য, বাংলাদেশের রোগীদের সঠিক, দক্ষ ও প্রযুক্তি-নির্ভর চিকিত্সাসেবা দেওয়া। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনের অবদানের প্রতিফলন এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার নতুন উদাহরণ।
সবুজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে সম্পূর্ণ নতুন শক্তি শিল্প-শৃঙ্খল নির্মাণ করেছে, যা বিশ্বব্যাপী বায়ুশক্তি ও ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়েছে। চীন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু শাসনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো কনভেনশন ও এর প্যারিস চুক্তিকে আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করে, ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অসাধারণ প্রচেষ্টা চালায়।
বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের উচ্চ-স্তরের সভায় প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের ভাষণ বৈশ্বিক প্রশাসনব্যবস্থায় নতুন প্রাণশক্তি ও গতি সঞ্চার করেছে। বিশ্বাস করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে চীন দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে, নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে যাবে; বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে যৌথভাবে একটি উন্নত ভবিষ্যত গড়ে তুলবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম