
দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়তে থাকা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার থেকে পাঠানো অনুরোধের পর ইউটিউব কমপক্ষে চারটি বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘অ্যাক্সেস’ ভারতে সীমিত করেছে। অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফরম ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে ভারতের ভেতরে চারটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেল জিও-ব্লকড হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব চ্যানেলকে ব্লক করা হয়েছে—যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভি। ভারতের দর্শকরা এখন আর এই চ্যানেলগুলো দেখতে পাবে না।
ভারতে অবস্থান করে ইউটিউবে এই টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে গেলে একটি বার্তা দেখা যাচ্ছে— ‘এই কনটেন্টটি বর্তমানে এই দেশে উপলব্ধ নয়, কারণ সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি আদেশ দেওয়া হয়েছে।’
ভারতীয় একটি ভিপিএন সার্ভার ব্যবহার করে ইউটিউবে চ্যানেলগুলো খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, এসব চ্যানেলের কনটেন্টে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং "জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত সরকারি অনুরোধের ভিত্তিতে" ব্লক করার বার্তা দেখানো হচ্ছে। ডিসমিসল্যাব তাদের পরীক্ষার ফলাফল যাচাই করতে নয়াদিল্লি ও কলকাতার দুই সাংবাদিকের সহায়তা নেয়, যারা নিশ্চিত করেন যে, ভারত থেকে এসব চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না।
যমুনা টিভির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইউটিউব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নোটিশ পেয়েছে যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের সরকারী অনুরোধে চ্যানেলটি ব্লক করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আপলোড হওয়া সব ভিডিওও ভারতীয় দর্শকদের জন্য নিষিদ্ধ থাকবে।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময় সামনে এলো, যখন ৬-৭ মে রাতে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে সামরিক অভিযানের পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে। অভিযানের পর ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রবল জাতীয়তাবাদী কভারেজ দেখা যায়।
এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ায়ার জানিয়েছে, তাদের ওয়েবসাইট thewire.in পুরোপুরি ভারতে ব্লক করা হয়েছে। ৯ মে সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে সংস্থাটি জানায়, “সংবিধানপ্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে ভারত সরকার ওয়েবসাইটটি সারা দেশে ব্লক করেছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ ভারত সরকারের তথ্য নিয়ন্ত্রণ নীতির অংশ হতে পারে, যা আঞ্চলিক উত্তেজনার সময়ে বিকল্প মত বা প্রতিবাদী সংবাদপত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেওয়া হয়।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম