
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ সহজেই আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। যদিও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, ইসরায়েলি সাম্প্রতিক হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা পুনর্গঠন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
গতকাল সোমবার (৭ জুলাই) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পেজেশকিয়ান। তাকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল পডকাস্টার টাকর কার্লসন।
সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব খুব সহজেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তবে ইসরায়েল এই সংলাপের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্ররোচনায় পড়ে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়েন।
পেজেশকিয়ান বলেছেন, এই অঞ্চলকে শান্তির পথে নিতে এবং ইসরায়েলকে তার সীমার মধ্যে রাখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন। অন্যথায় তিনি নিজেই এক অন্তহীন সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, তিনি নিশ্চিত নন ট্রাম্প পেজেশকিয়ানের মন্তব্য দেখেছেন কিনা। তবে তিনি একমত যে, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পই সঠিক ব্যক্তি।
সাক্ষাৎকারে ইরানি প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলা শুরু করে, যা ১২ দিন স্থায়ী এক আকাশযুদ্ধে পরিণত হয়। এতে ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কীভাবে আবার যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করবো, যখন ইসরায়েলের হামলা চলমান আলোচনা ভেঙে দেয়?”
আরও বিস্ফোরক অভিযোগে পেজেশকিয়ান বলেন, ইসরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তার ভাষায়, হ্যাঁ, তারা চেষ্টা করেছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। আমি এক বৈঠকে ছিলাম, যেখানে তারা বোমা ফেলতে চেয়েছিল।
ইসরায়েল এ অভিযোগের এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে গত মাসে এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলায় ৩০ জনের বেশি নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং ১১ জন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
এ দিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে ইরান ইস্যুতে আলোচনার কথা রয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে হামলা “বিশাল সাফল্য” ছিল।
গত ২৪ জুন থেকে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেন, নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যে ‘চিরন্তন যুদ্ধের পরিকল্পনা’ করে চলেছেন।
তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে যেন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু না করেন।
উল্লেখ্য, ইরান সবসময়ই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম