বুধবার,

০৬ আগস্ট ২০২৫,

২১ শ্রাবণ ১৪৩২

বুধবার,

০৬ আগস্ট ২০২৫,

২১ শ্রাবণ ১৪৩২

Radio Today News

আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াবো না: প্রধান উপদেষ্টা

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ৫ আগস্ট ২০২৫

Google News
আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াবো না: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা শুধু অতীত স্মরণ করতে আসি নাই, একটা শপথ গ্রহণ করতে এসেছি। আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াবো না।’ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।  

ড. ইউনূস বলেন, আজ আমরা পুরো জাতি একসঙ্গে স্মরণ করছি এমন একদিন, যা এ দেশের ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখে গেছে। ৫ আগস্ট শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন। আজ আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ দেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। লাখো প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। 

তিনি বলেন, কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দি পরেও এ দেশের মানুষ  সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সংকটময় অধ্যায়, ১৬ বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এ দেশের এ বিপুল সংক্ষক তরুণরা ১৬ বছর ধরে ক্রমাগত হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। ভালো ফলাফল করেও চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চাকরিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও তদবির বাণিজ্য।  যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি, এলাকার মাফিয়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেনি; তার চাকরি হয়নি।  সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি ছিল মূলত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আরেকটি হাতিয়ার।  এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলেও ফ্যাসিবাদী সরকারের টনক নড়েনি। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘ এই সময়ে মাফিয়াতন্ত্র কায়েক করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল। যারা আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলবে, কাজ করবে। স্বৈরাচারের পক্ষের শক্তি হলেই তার চাকরি হবে, কাজ মিলবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এমনকি বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও এ ধরনের সুবিধাভগী শ্রেণি তৈরি হয়েছিল।  

তিনি বলেন, এ দেশের গরিব মেহনতি মানুষের পয়সা লুট করে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের সহযোগীরা এক একজন টাকার পাহাড় গড়ে তোলে। সীমাহীন দুর্নীতির কবলে পড়ে অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি ন্যায্য দাবি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রহাতে আন্দোলনকারীদের পিটিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছরে যারাই সরকারের বিপক্ষে কথা বলেছে, নাগরিকদের অধিকারের কথা বলেছে, তাদের গ্রেপ্তার অথবা গুম করা হয়েছে।  লাখ লাখ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের আটক, গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

ড. ইউনূস বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ২৪ এর জুলাইয়ে দেশের ছাত্র সমাজ, তরুণ প্রজন্ম সাধারণ মানুষ সবাই একত্রিত হয়, এক নতুন দিনের প্রত্যাশা, সমস্বরে তারা বলে ওঠে এবার ফ্যাসিবাদকে যেতে হবে। তবুও দেশের মানুষকে গুলি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকার। তারা নির্বাচারে গুলি করেছে, হত্যা করেছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যার তথ্য লুকাতে চেয়েছে।  রাতের অন্ধকারে এলাকায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রদের আটক করেছে।   

তিনি আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ আহতদের তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি।  হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন আহতদের ভর্তি না করা হয়। এ কারণে বহু মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে আমি জাতির সূর্য সন্তান জুলাই শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। জুলাই অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, দৃষ্টি হারিছেন; আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ জাতি আপানাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।  

তিনি আরও বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ ও যাবতীয় প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের  ওপর ন্যাস্ত করা হয়,  এখন পর্যন্ত ৮৩৬টি শহীদ পরিবারে মধ্যে ৭৭৫টি শহীদ পরিবারকে মোট ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতাবাবদ ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে।  অবশিষ্ট যারা আছেন, কয়েকটি বিষয় নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর পাশাপাশি ১৩ হাজার ৮০০ জন জুলাই যোদ্ধাকে  তিনটি ক্যাটাগরিতে নগদ টাকা ও চেক বাবাদ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ জন অতি গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধাকে সিঙ্গপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও রাশিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। দেশের সকল হাসপাতালে জুলাই যোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষে থেকে জুলাই শহীদ ও আহতদের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, তবে জুলাইয়ের মহানায়কদের আত্মত্যাগ তখনই স্বার্থক হবে, যখন এ দেশকে সত্যিকারের একটি জনকল্যাণকর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।  

তিনি আরও বলেন, আজ আমরা শুধু অতীত স্মরণ করতে আসি নাই, একটা শপথ গ্রহ করতে এসছি। শপথ এই, আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াবো না। আমরা প্রতিষ্ঠা করবো একটি জবাবদিহিমূলক মানবিক গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। এমন রাষ্ট্র যা সবসময় জনকল্যাণে কাজ করবে।  জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের পথ চলার প্রেরণা। তাদের স্বপ্নই হবে আগামীর বাংলাদেশের নির্মাণ রেখা। আজকের এই দিনে এটা হোক আমাদের শপথ।  

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের