বুধবার,

০৬ আগস্ট ২০২৫,

২২ শ্রাবণ ১৪৩২

বুধবার,

০৬ আগস্ট ২০২৫,

২২ শ্রাবণ ১৪৩২

Radio Today News

ফ্যাসিবাদ পতনের পর নতুন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম: ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ৫ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ১৮:৩৭, ৫ আগস্ট ২০২৫

Google News
ফ্যাসিবাদ পতনের পর নতুন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম: ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার বিকেলে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঐতিহাসিক দলিল প্রকাশের সময়ে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের শরীক সকল নেতৃবৃন্দ। গত বছরের এই দিনে গণআন্দোলন ও জনতার প্রবল চাপের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। পতন হয় দীর্ঘদিন দেশের মানুষের ওপর দমন পীড়ন চালানো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ড. ইউনূস এই ঘোষণার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ও জনগণের রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা উপস্থাপন করেন।

ঘোষণাপত্রে ড. ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই দেশ আর কখনো ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়ায় ফিরবে না। জনগণই হবে রাষ্ট্রক্ষমতার উৎস।” তিনি দাবি করেন, গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। যেখানে ভোটাধিকার ছিল কেবল কাগজে-কলমে। ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এসব নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, ভোট জালিয়াতি এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির দমনপীড়নই ছিল সরকারের রুটিন।

ঘোষণাপত্র থেকে ড. ইউনূস বলেন, এই শাসনের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর চলা আন্দোলনের চূড়ান্ত ফলাফল ছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ওই দিন রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে মানুষ রাস্তায় নামে, প্রশাসনের একাংশ জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, সংবিধানের ৭০(৩) ধারা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে ৮ আগস্ট ২০২৪ থেকে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে)। জনগণের প্রত্যক্ষ দাবির প্রতিফলন হিসেবেই এই সরকার গঠিত হয়েছে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়।

‘জুলাই ঘোষণা’ শেখ হাসিনার শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে দেশকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বিরোধী দল, ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলন, প্রবাসী নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ মানুষও এই শাসনব্যবস্থার নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি।

ড. ইউনূসের ঘোষণাপত্র ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি রূপরেখাও উপস্থাপন করে। যেখানে থাকবে স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা, কার্যকর বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গড়তে চাই যেখানে সরকার জনগণের অধীন থাকবে, আর রাষ্ট্র হবে নাগরিকবান্ধব।”

ড. ইউনূস বলেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি আন্দোলনের ফসল, যার দায়িত্ব জনগণের হাতে সরকার ফিরিয়ে দেওয়া।”

ঘোষণার শেষাংশে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে তাদের শক্তি দেখিয়েছে। এই পরিবর্তনের ধারাকে টিকিয়ে রাখা, প্রতিষ্ঠানকে গণমুখী করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মানবিক রাষ্ট্র রেখে যাওয়াই এখন আমাদের কাজ।”

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের