বিশ্ব-শক্তির ভারসাম্য বদলাচ্ছে। বাড়ছে অনিশ্চয়তা ও অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের হার। বহুমেরুকরণ প্রক্রিয়াও এগোচ্ছে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে। তবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন যত বাধার মুখেই পড়ুক না কেন, এটি এখন অপ্রতিরোধ্য। আর এই প্রক্রিয়াই উচ্চস্তরের উন্মুক্ততা বিস্তারের নতুন সুযোগ তৈরি করছে চীনের জন্য।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতির জন্য আগামী পাঁচ বছরের একটি উন্নয়ন রোডম্যাপ এঁকেছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নেতৃত্ব। জাতীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ১৫তম পাঁচ-সালা পরিকল্পনা (২০২৬-২০৩০) প্রণয়ন সংক্রান্ত ওই সুপারিশপত্রে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে পার্টি। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে চীনের হাতে থাকা কিছু কৌশলগত শক্তি। তবে অক্টোবরের শেষ দিকে গৃহীত ওই সুপারিশপত্রে এও বলা হয়েছে, চীন এখন উন্নয়নের এমন এক পর্বে রয়েছে যেখানে কৌশলগত সুযোগের পাশাপাশি আছে বেশ কিছু ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ।
একটি নতুন প্রযুক্তিগত বিপ্লব ও শিল্পখাতে রূপান্তরের ঢেউয়ের শব্দ গোটা বিশ্বই এখন শুনতে পাচ্ছে। উদ্ভাবন ও শিল্পায়ন এগোচ্ছে জ্যামিতিক হারে। আর এসব ক্ষেত্রে অগ্রগামী হওয়ার যে সুবিধা আছে, সেসব পুরোপুরিই পাচ্ছে চীন।
আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতিতে বিশ্বের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে থাকলেও উল্লেখযোগ্য কিছু ‘শক্তি’ ধরে রেখেছে চীন—
প্রথমত, চীনা বৈশিষ্ট্যের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি বেশ মজবুত। পার্টির সামগ্রিক নেতৃত্ব, বড় উদ্যোগে সম্পদকে কাজে লাগানোর সক্ষমতা, এবং একটি দক্ষ বাজার ও সরকারি ব্যবস্থার সমন্বয়ও রয়েছে দেশটিতে। এগুলো একসঙ্গে চীনকে যোগাচ্ছে উন্নয়নের শক্তিশালী নিশ্চয়তা।
দ্বিতীয়ত, চীনের সুবিশাল দেশীয় বাজারে আছে বিপুল ভোক্তা সম্ভাবনা। এখানে বিনিয়োগের সুযোগ অবারিত। সেইসঙ্গে আছে অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা। পাশাপাশি, চীনের আইনব্যবস্থা ও ব্যবসায়িক পরিবেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতিও প্রতিনিয়ত বিশ্বের অন্য দেশগুলোর আগ্রহ বাড়ছে।
তৃতীয়ত, চীনের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, উদ্ভাবনশীলতা এবং স্থিতিস্থাপকতার মজবুত ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে দেশটির স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্প ব্যবস্থা।
চার নম্বরে আছে চীনের শক্তিশালী মানবসম্পদ। দক্ষ কর্মী, উদ্যোক্তা ও বিজ্ঞানীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে দেশটিতে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ধারাবাহিক উদ্ভাবনী শক্তি যোগাচ্ছে এই সম্পদ।
আর যেসব ক্ষেত্রে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে সেগুলো হলো—বাজারের চাহিদা পুরোপুরি জেগে ওঠেনি, ভেতরের অর্থনীতির গাড়িটাও মাঝে মাঝে আটকা পড়ছে ‘ট্র্যাফিক জ্যামে’।
কৃষি আর গ্রামাঞ্চলকে নিয়ে এখনও অনেক ভাবার বাকি চীনে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের ১৫তম পাঁচ-সালা পরিকল্পনায় সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো—কোন জিনিসটায় জোর দেওয়া দরকার, সেটা ঠিকঠাক বোঝা, আর সমস্যার সমাধানে নতুন আইডিয়া বের করা।
মোদ্দাকথা, বড় পরিবর্তন মানেই বড় চ্যালেঞ্জ, সাথে বড় সুযোগও। চীনকে অবশ্যই কৌশলগত স্থিরতা বজায় রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। আর চীন যদি এই অগ্রগতির ধারা ধরে রাখতে পারে, তবে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্ব অর্থনীতিও পাবে অনুকরণীয় উদাহরণ, পাবে নতুন দিশা।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

