ছিংতাওয়ের সিনেমাপাড়ায় প্রযুক্তির ঝলকানি

রোববার,

০৯ নভেম্বর ২০২৫,

২৫ কার্তিক ১৪৩২

রোববার,

০৯ নভেম্বর ২০২৫,

২৫ কার্তিক ১৪৩২

Radio Today News

ছিংতাওয়ের সিনেমাপাড়ায় প্রযুক্তির ঝলকানি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ৯ নভেম্বর ২০২৫

Google News
ছিংতাওয়ের সিনেমাপাড়ায় প্রযুক্তির ঝলকানি

চীনের ছিংতাও শহর ছিল একসময়ের উপকূলীয় বন্দরনগরী। এখন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নির্মাণে বিশ্বমানের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শহরটি। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত শহরের ‘চায়না মুভি মেট্রোপলিস’কে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি সৃজনশীল পরিবেশ। অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে চীনে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে আগের চেয়ে অনেক সহজ ও গতিশীল। চীনা সিনেমা এখন বিশ্বের নানা দেশে আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারছে। 

ছিংতাওতে আছে ৪০টি আন্তর্জাতিক মানের সাউন্ড স্টেজ, তাপ নিয়ন্ত্রিত আন্ডারওয়াটার স্টুডিও, বিশাল খোলা আউটডোর সেট, পোস্ট-প্রোডাকশনের জন্য ডিজিটাল ল্যাব এবং হাজারের বেশি সংস্থা—যারা পোশাক, সেট নির্মাণ থেকে শুরু করে পরিবহন ও আবাসন—সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। সব কিছুই পাওয়া যাবে এক ছাদের তলায়, যার আয়তন প্রায় ১৭ লাখ বর্গমিটার। 

চায়না মুভি মেট্রোপলিসের টেকনিক্যাল পরিচালক ইয়ু ছিউবেই বললেন, ‘আমাদের আছে ডোম লাইট ফিল্ড। এটি একটি উচ্চ-মানের মুখ স্ক্যানিং সিস্টেম, যা মুখের রোমের গোড়া পর্যন্ত ডিটেইল ধারণ করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে অভিনেতাদের বয়স কমানো বা বাড়ানোসহ সূক্ষ্ম ভিজ্যুয়াল এফেক্ট তৈরি করতে পারি। আগামী বছর এ প্রযুক্তিতে আরও উন্নত এআই ও রিয়েল-টাইম স্ক্যানিং যুক্ত হবে।’

ব্লকবাস্টার সায়েন্স ফিকশন ফ্র্যাঞ্চাইজি `দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ’-এর চিত্রগ্রহণের স্থান ছিল এখানকার স্টুডিও ফাইভ। পার্কের প্রযুক্তিগত দক্ষতার এক ঝলক দেখাবে এটি। 
অত্যাধুনিক মোশন ক্যাপচার সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত এ স্টুডিও ভার্চুয়াল প্রি-ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং রিয়েল-টাইম রেন্ডারিংয়ের সুবিধা দিতে পারে। আর এতে নির্মাতার কল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে একটুও সময় নেয় না।

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের উপপরিচালক হু রুইয়ান জানালেন, ‘বহুমাত্রিক সমন্বয়ের মাধ্যমে এখানে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও গতিশীল ইন্ডাস্ট্রি ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। যা স্থানীয় শিল্প, সৃজনশীলতা এবং বাজারকে একসঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে।’

এখানে শুধু প্রযুক্তি নয়—পূর্ণাঙ্গ একটি সৃজনশীল ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে, যেখানে মেধার বিকাশ, প্লাটফর্ম তৈরি, রিসোর্স ও সার্ভিস—সবই গাঁথা আছে সুতোয়।
এদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন চলচ্চিত্র নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখছে—বিশেষ করে প্রি-প্রোডাকশন ও পোস্ট-প্রোডাকশন ধাপে।
জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি এখন চরিত্র বাছাই থেকে শুরু করে স্টোরিবোর্ড তৈরির কাজ করছে কয়েক মিনিটেই। 

চায়না ফিল্ম গ্রুপের এআই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান মা পিং জানালেন, ‘এআই চালিত ডাবিং এখন যেকোনো ভাষায় সংলাপকে চরিত্রের আবেগ, স্বর এবং অভিব্যক্তির সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারে। এর ফলে চীনা চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক প্রচার আরও সহজ হবে।’

পোস্ট-প্রোডাকশনে এআই এখন ‘অদৃশ্য হাত’ হিসেবে কাজ করছে—যা খরচ কমাচ্ছে, সময় বাঁচাচ্ছে এবং ভিজ্যুয়ালের মান বাড়াচ্ছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালচার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের অডিওভিজ্যুয়াল সেন্টারের পরিচালক তেং কুইইয়াও জানালেন, ‘জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কল্পনা ও ভিজ্যুয়াল বাস্তবতার দূরত্ব কমিয়েছে। এটি চলচ্চিত্র নির্মাণের খরচ, সময়সূচি এবং সৃজনশীল শ্রমবণ্টন—সবকিছুই বদলে দিচ্ছে। চলচ্চিত্রে জন্ম নিচ্ছে নতুন এক নান্দনিকতার।’
ছিংতাওয়ের এই প্রযুক্তিনির্ভর চলচ্চিত্র ইকোসিস্টেম শুধু নির্মাণকারীদের নয়—পর্যটকদেরও আকর্ষণ করছে। এখানে সিনেমার সেট এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন অপারেশন হাদাল- এর সাবমেরিন থিম সেট দেখতে এ বছর দুইশরও বেশি শিক্ষাসফরকারী দল এসেছিল এখানে।

প্রযুক্তি, ট্যালেন্ট এবং শিল্প চেইন—এসব এক ছাদের নিচে জড়ো হতেই ছিংতাও বিশ্ব চলচ্চিত্র মানচিত্রে শক্ত করছে নিজের অবস্থান।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের