আপনার দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে তো, যেসব লক্ষণ দেখলে সাবধান হতে হবে

সোমবার,

১০ নভেম্বর ২০২৫,

২৫ কার্তিক ১৪৩২

সোমবার,

১০ নভেম্বর ২০২৫,

২৫ কার্তিক ১৪৩২

Radio Today News

আপনার দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে তো, যেসব লক্ষণ দেখলে সাবধান হতে হবে 

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:০৭, ৯ নভেম্বর ২০২৫

Google News
আপনার দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে তো, যেসব লক্ষণ দেখলে সাবধান হতে হবে 

দৃষ্টিশক্তি হারানো বলতে আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টি হারানোকে বোঝায়। এটি আকস্মিকভাবে বা ধীরে ধীরে, এক বা দুই চোখেই হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি হারানো সাময়িক বা চিকিৎসাযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সি প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো ধরনের দৃষ্টিজনিত সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সম্পূর্ণ অন্ধ। বয়স, রোগ, আঘাত বা মাইগ্রেনসহ বিভিন্ন কারণ দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের জন্য দায়ী হতে পারে। চিকিৎসকরা দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের কারণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।  

দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ধরন:  দৃষ্টিশক্তি হারানো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:

সেন্ট্রাল ভিশন লস: চোখের কেন্দ্রের অংশে দেখার সমস্যা
পেরিফেরাল ভিশন লস: চারপাশ বা কোণের দিক দেখতে সমস্যা
সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীনতা
নাইট ব্লাইন্ডনেস: অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা
ঝাপসা বা কুয়াশাচ্ছন্ন দৃষ্টি: কখনও কখনও মানুষ শুধু ছায়া বা অস্পষ্ট আকার দেখতে পারেন।হ

ঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ

মাইগ্রেন
প্রায় ২৫–৩০ শতাংশ মাইগ্রেন রোগীর ভিজ্যুয়াল অরা দেখা যায়। কেউ কেউ জিগজ্যাগ লাইন, ঝিলিমিলি আলো, টানেল ভিশন বা একপাশের দৃষ্টি হারানোর মতো লক্ষণ অনুভব করেন। সাধারণত ১০–৩০ মিনিট স্থায়ী হয়।

কেরাটাইটিস

কর্নিয়ার প্রদাহ, যা প্রায়ই কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশি হয়। এতে চোখে ব্যথা, ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি কমে যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসায় এটি সেরে যায়।

কনজাঙ্কটিভাইটিস বা পিঙ্কআই

চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ব্যথা ও ঝাপসাভাবের পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে। সাধারণত এটি নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হতে পারে।

চোখের ক্লান্তি

দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকালে চোখে চাপ পড়ে এবং দেখার সমস্যা হতে পারে। ২০-২০-২০ নিয়ম (প্রতি ২০ মিনিটে ২০ ফুট দূরে ২০ সেকেন্ড তাকানো) উপকারী।

কর্নিয়াল আঘাত

চোখে আঘাত লাগলে সাময়িক বা স্থায়ী দৃষ্টি হারানোর ঝুঁকি থাকে। দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি।

ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ

এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন 
৫০ বছরের বেশি মানুষের কেন্দ্রীয় দৃষ্টি নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ। ধীরে ধীরে দৃষ্টির কেন্দ্রে ঝাপসা দেখা বাড়তে থাকে।
গ্লুকোমা
চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে পেরিফেরাল দৃষ্টি নষ্ট হতে থাকে। শুরুতে কোনো লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে, তাই নিয়মিত পরীক্ষা জরুরি। ওষুধ, লেজার বা সার্জারি লাগতে পারে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি: ডায়াবেটিস রোগীদের রেটিনার রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দৃষ্টি হারানো বা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন: দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। যদি নিম্নোক্ত লক্ষণ দেখা যায়, তবে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন:

তীব্র মাথাব্যথা
কথা বলতে অসুবিধা
মুখ বেঁকে যাওয়া
দেহের এক পাশে দুর্বলতা
চোখে তীব্র ব্যথা

প্রতিরোধ: দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণভাবে হারানো সবসময় প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু অভ্যাস অনুসরণ করে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং ঝুঁকি কমানো যায়।

চোখকে বিশ্রাম দিন: প্রতি ২০ মিনিট পরপর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে অন্তত ২০ ফুট দূরে থাকা কোনো কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকান।
সুরক্ষামূলক চশমা ব্যবহার করুন : কিছু কাজ—যেমন খেলাধুলা, নির্মাণকাজ বা ঘরের মেরামতের কাজ—করার সময় সেফটি গ্লাস বা গগলস ব্যবহার করুন।
সানগ্লাস পরুন: সরাসরি রোদে না গিয়ে সানগ্লাস ব্যবহার করুণ যেটা অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখের সুরক্ষা দেবে।   
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন: কম দৃষ্টিশক্তির অনেক কারণ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে তৈরি হয়।
তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং ভালো জীবনযাপন এসব ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করুন: নিয়মিত চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে চোখ পরীক্ষা করান, নিজের চোখের রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন।
পুষ্টিকর খাবার খান ও ধূমপান বন্ধ করুন: ভালোভাবে খাওয়া এবং ধূমপান পরিহার করা চোখকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
দৃষ্টিশক্তি আমাদের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং সামান্য পরিবর্তনও অবহেলা করা উচিত নয়। যদিও সব ধরনের দৃষ্টি হারানো প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবুও নিয়মিত চোখের যত্ন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক অভ্যাস এবং সময়মতো চিকিৎসা দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক সচেতনতা ও যত্ন অনুসরণ করলে চোখের রোগের ঝুঁকি কমানো এবং দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ দৃষ্টি বজায় রাখা সম্ভব।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের