বুধবার,

২০ আগস্ট ২০২৫,

৪ ভাদ্র ১৪৩২

বুধবার,

২০ আগস্ট ২০২৫,

৪ ভাদ্র ১৪৩২

Radio Today News

জুলাই সনদ সংবিধানের ওপর রাখলে খারাপ নজির হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১৯ আগস্ট ২০২৫

Google News
জুলাই সনদ সংবিধানের ওপর রাখলে খারাপ নজির হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ার সূচনা ও ২, ৩ ও ৪ নম্বর দফা নিয়ে বিএনপির স্পষ্ট আপত্তি রয়েছে। তিনি জানান, খসড়ার সূচনায় কিছু বিষয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব মন্তব্য করেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও সেগুলো সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে কিছু প্রস্তাবনা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা যথাযথ নয় এবং বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, সব বিষয় বিশ্লেষণ করে এবং সনদের খসড়ায় যেসব অসঙ্গতি রয়েছে, তা মূল্যায়নের পর বিএনপি কমিশনের কাছে তাদের মতামত পাঠাবে। আগে বলা হয়েছিল, আগামী সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংবিধান সংশোধনী পাস করা হবে, কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি অনুপস্থিত।

তিনি আরও বলেন, ৮৪টি দফার মধ্যে যেসব দফায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে, যেসব দফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এসেছে সেগুলোর সমাধান কীভাবে হবে এবং সংবিধান সংস্কারের বিষয়গুলো কীভাবে কার্যকর হবে—এগুলো এখনই পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এই সব দিক বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি কমিশনকে বিস্তারিত মতামত দেবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, অনেক প্রস্তাবনা রয়েছে যেগুলো অধ্যাদেশ কিংবা সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য জরুরি এবং সেই বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদ তার মেয়াদের প্রথম দুই বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করবে—এমন প্রতিশ্রুতি আগের খসড়ায় ছিল, কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় তা বাদ পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় দফার আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদকে সংবিধানের উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী। তার মতে, কোনো ডকুমেন্ট সংবিধানের ওপরে হতে পারে না এবং যদি এমন হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতের জন্য একটি খারাপ নজির সৃষ্টি করবে। এছাড়া, সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এমন বিধানও সংবিধানসম্মত নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা নিশ্চিত। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন এবং কমিশনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে একাধিক উপদেষ্টা নির্বাচন আয়োজন নিয়ে যথেষ্ট দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করেছেন। তাই এ বিষয়ে বিএনপির কোনো সন্দেহ নেই। তবে যেসব রাজনৈতিক নেতা মাঠে বক্তব্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ ছড়াচ্ছেন, তারা হয়তো কৌশলগত কারণে বিভিন্ন পক্ষকে চাপে রাখার উদ্দেশ্যে তা করছেন। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো মন্তব্য নেই বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে গুলশানের নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “পুরো জাতির জন্য খারাপ নজির তৈরি করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।” তিনি মনে করেন, এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক কাঠামোর ভারসাম্য বিনষ্ট করতে পারে এবং এর বিরূপ প্রভাব জাতীয়ভাবে পড়তে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমদবলেন, জুলাই সনদের ‘প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ’ যদি সাংবিধানিকভাবে বলবৎ হয় এবং এর বৈধতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা না যায়—এই বিষয়টি অত্যন্ত আপত্তিজনক।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এই এখতিয়ার কি আমাদের সংবিধান কাউকে দিয়েছে?” তার মতে, সংবিধান কারো এমন একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দেয় না এবং এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ তো সেলফ অর্ডিন্যান্সও নয়, আইনও নয় এবং রায়ও নয়। এখানে ব্যাখ্যার জন্য আপিল বিভাগ কে পাঠাবে? কিসের ভিত্তিতে যাবে? সেই প্রশ্নগুলো আগে নির্ধারণ করতে হবে।

তিনি আরও জানান, বিএনপি এই সনদ নিয়ে যখন আনুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেবে। তখন তারা তাদের আপত্তির সব দিক স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে। তার মতে, এই সনদে থাকা বিতর্কিত ধারা ও প্রস্তাবগুলো নিয়ে মুক্ত আলোচনার সুযোগ থাকা উচিত, যাতে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের