
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্রের শঙ্কা জানিয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। অন্যদিকে ভোট বানচালের আশঙ্কা জানিয়েছে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে প্রচারণায় তারা এই আশঙ্কার কথা জানান। এদিকে একই দিনে অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়ে ফেসবুকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের।
খন্দকার মোকাররম অ্যাকাডেমিক ভবনে প্রচারণার সময় আবিদুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন ঘিরে মব তৈরি ও সাইবার বুলিংয়ের শঙ্কা রয়েছে। কমিশন দুর্বল ভূমিকা পালন করছে এবং প্রশাসন সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্বই প্রমাণ করে যে, ডাকসু নির্বাচন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচন ষড়যন্ত্রের মুখে পড়লে জাতীয় নির্বাচনও ষড়যন্ত্রের মুখে পড়বে। ডাকসু নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে সরকারের কার্যকর ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুধু বেঁচে থাকতে চাই, এতটুকু দয়া দেখানোর অনুরোধ: কাদের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেছেন, আমার ডাকসুতে জেতা লাগবে না, কেবল বেঁচে থাকতে চাই। এতোটুকু দয়া অন্তত আমাকে দেখানোর অনুরোধ। সেই রাজাকার নিয়ে কথা বলার পর থেকেই যে শুরু হইছে, প্রতিনিয়ত সেটা আরও বাড়তেছে। তারপর থেকেই আমি ঘুমাতে পারি না, মাঝরাতে জেগে যাই; শরীর কাঁপতে থাকতে। একটা মানুষকে নিয়ে আর কত করবেন? মানুষের কতটুকুও বা ধৈর্য ক্ষমতা থাকে? আমি আর কতদিন নিতে পারবো জানি না।
বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল অনলাইনে এই হেনস্তাটা আমার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও মানা যাইতো, বাড়িতে গিয়ে আমার আম্মাকে পর্যন্ত কথা শুনাচ্ছেন! ১০ দিন আগের বক্তব্য কাট করে প্রোপাগান্ডা না ছড়ালেও পারতেন। পুরা বক্তব্য তুলে ধরলে বক্তব্যের সারমর্ম বুঝতে পারতো মানুষ। কেবল তো শুরু, আরও ৫ দিন বাকি। ততোদিনে কি যে ঘটবে, সেটা ভাবতে গেলে আরও বেশি ট্রমাটাইজড হয়ে যাই।
ভোট বানচালের আশঙ্কা শিবির প্রার্থী সাদিকের
শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম প্রচারণাকালে বলেছেন, ভোট বানচালের চেষ্টা চলছে। তবে সব প্রার্থী দায়িত্বশীল আচরণ করলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।
তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের পরিণতি শেখ হাসিনার থেকেও খারাপ হবে। সাদিক কায়েম আরও বলেন, সাইবার বুলিং, প্রোপাগান্ডা এবং বহিরাগতদের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
২০১৯ সালের পুনরাবৃত্তি হলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান: বাকের মজুমদার
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, ২০১৯ সালের মতো কারচুপি হলে শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবে। আগাম ব্যালট বাক্স পূরণ বা ভোট কারচুপির কোনো চেষ্টা করা হলে তা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। আজ বৃহস্পতিবার মোকাররম ভবনে প্রচারণাকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বাকের বলেন, প্রার্থীদের নিয়ে অনলাইনে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন অনেকে। আমাদের প্যানেলের সদস্যদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী মন্তব্যও করা হচ্ছে। ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে এবং প্রার্থীদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রশাসন এসব ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা
১৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রঅধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ’ প্যানেল। আজ বৃহস্পতিবার ঢাবির মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন জোটের ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা।
তাদের ইশতেহারগুলো হলো- ডাকসুকে নিয়মিত ক্যালেন্ডার ইভেন্টে পরিণত করা; এক শিক্ষার্থী, এক বেড, এক টেবিল বাস্তবায়নে কাজ করা; খাবারের মান উন্নত করা, প্রয়োজনে এক্ষেত্রে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা; ফুল ফ্রি স্কলারশিপ ফর এভরি স্টুডেন্ট’ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করা; বিদ্যমান গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে আরও উন্নত ও আধুনিক করা; আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন পর্যাপ্ত লাইব্রেরি ও ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা চালু করা; রেজিস্টার বিল্ডিংকে অটোমেশন ও ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনা; বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ বহিরাগত ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ; বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্টেশন সংকট সমাধান করা; মেডিকেল সেন্টারে আধুনিক সেবা নিশ্চিত ও হল এলাকায় ফার্মেসি স্থাপন।
২৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের
আসন্ন ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে সমন্বিত শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ২৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৪টায় মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. জামাল উদ্দিন খালিদ।
তাদের ইশতেহারগুলো হলো- ক্যাম্পাস হবে নিরাপদ, সহিংসতামুক্ত; কোনো দলীয় আধিপত্য নয়; ঢাবিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া; শিক্ষক নিয়োগে দক্ষতা, যোগ্যতাকে প্রাধান্য; আধুনিক কারিকুলাম প্রণয়ন; সহিংসতামুক্ত নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি; আধুনিক অবকাঠামো, সবুজ ক্যাম্পাস, নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিশেষ সুবিধা প্রণয়ন উল্লেখযোগ্য।
৮-১০ সেপ্টেম্বর ঢাবিতে সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
আসন্ন ডাকসু উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পাস এলাকায় সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ উপলক্ষ্যেৃ আগামী ৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলো দিয়ে সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, রোগী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন) ব্যতীত অন্য কোন যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম